আটঘরিয়া ও চাটমোহরে ফসলি জমিতে চলছে গণহারে পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনার আটঘরিয়া ও চাটমাহরে নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ফসলি জমিতে গণহারে চলছে পুকুর খনন। প্রতিদিনই এ দুটি উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে খনন যন্ত্র এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। প্রতি বছর বাড়ছে পুকুর খননের আকার-আয়তন। কমে আসছে ফসলি জমি। উপজেলা জুড়ে প্রকাশ্যে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চললেও যাদের দেখভাল করার কথা সেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ রয়েছেন নিশ্চুপ। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে দু-একটি পুকুর খনন বন্ধ করলেও পুনরায় আবার খনন করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চলছে। আর খননের পর বেশিরভাগ মাটি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি ও ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। কর্মকতা-কর্মচারী ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অবাধে চলছে পুকুর খনন। জমি মালিকরা নাম মাত্র টাকা ব্যায়ে পুকুর খনন করিয়ে নিচ্ছেন। আর প্রতি ট্রলি মাটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের সুতির বিল, অভিরামপুর, রায়পুর, চাঁদভা ইউনিয়নের ভরতপুর, কমরেশ^র, সারুটিয়া, বয়ড়া, মাজপাড়া ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠের ফসলী জমি কেটে পুকুর খনন চলছে। যেন দেখার কেউ নাই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। আর এই সুযোগে থানা পুলিশ উৎকোচ নিয়ে মাটি কাটার অনুমমতি দিয়ে যাচ্ছেন বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে আটঘরিয়ার চাঁদভা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় বিভিন্ন পুকুর সংষ্কার করা হচ্ছে কিন্তু থানার এএসআই রফিকুল ইসলাম (থানার ক্যাশিয়ার) তিনি প্রত্যেক কৃষকেরে কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

একই ইউনিয়নের বয়ড়া গ্রামের ফরিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তার একটি পুকুর খনন চলছে। কিন্তু আটঘরিয়া থানার এএসআই রফিকুল ইসলাম তার কাছ থেকে দুই দুই বার ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। তিনি বলেন, টাকা না দেওয়ায় মাটি কাটা বদ্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। বাধ্য হয়ে দুই বারে ২৫শ টাকা করে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে ঐ এএসআইকে।

এ ব্যাপারে আটঘরিয়া থানার এ এস আই রফিকুল ইসলাম টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা মিথ্যা।

আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকরাম আলী বলেন, মাটি কাটা হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা, হান্ডিয়াল, গুনাইগাছা, নিমাইচড়া, পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। আর এই পুকুর খননের ফলে আস্তে আস্তে কমে আসছে ফসলি জমির পরিমাণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝামেলা বিহীন অর্থ উপার্জনের জন্য পুকুর খনন করছেন কিছু সংখ্যক জমি মালিক। পরে বার্ষিক মোটা অঙ্কে লিজ মানিতে মৎস্য চাষিদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। অথচ গণহারে পুকুর খননে ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বর্ষার সময় জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান রশীদ হোসাইনী বলেন, ‘পুকুর খননের বিষয়টি উদ্বেগজনক। এতে মাছের চাষ বৃদ্ধি হলেও আশঙ্কাজনকভাবে ধানি জমির পরিমাণ কমে আসছে। এতে বছর বছর ধান বা সবজি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া উচিত।’

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া যে কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে এবং ফসলি জমিতে পুকুর খননকারীদের তালিকা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!