আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের শেষ স্ট্যাটাস
বিনোদন: বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নিজ ভুবনে ডুবে থাকতেন; সুর আর গান নিয়ে। এর মধ্যে কিছুদিন পরপর ফেসবুকে এসে নানা বিষয়ে কথা বলতেন। যার বেশিরভাগই থাকত দেশ, মাটি, মানুষ আর মমতার কথা।
তার সেই সহজ-সরল স্বীকারোক্তি, উক্তি- অনেকেই অনুসরণ করতেন। গত ২ জানুয়ারি তেমনই একটি পোস্ট দিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত এ খ্যাতিমান।
সঙ্গে নিজের একটি ছবি দিয়েছিলেন। লেখেন, ‘আমাকে যেন ভুলে না যাও… তাই একটা ছবি পোস্ট করে মুখটা মনে করিয়ে দিলাম।’
এভাবে আর ছবি পোস্ট করা হবে না তার। কিন্তু ছবিটার দিকে তাকিয়ে অনেকেই হয়তো চোখের পানি ফেলবেন। ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ক্যাপশন আর ছবিটিও অনেকেই শেয়ার করছেন। সঙ্গে থাকছে শিল্পীর প্রতি তাদের ভালোবাসা আর আক্ষেপ।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল অসুস্থ ছিলেন। মহান একাত্তরের রণাঙ্গনের এই যোদ্ধা ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধীর ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। আর এ কারণে ঘরের বাইরে চলাচলও অনেকটা কমে গিয়েছিল।
গত বছরের মে মাসে অসুস্থতা আর নিজের এই জীবনযাপন নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
ফেসবুক পোস্টের লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘সরকারের নির্দেশেই ২০১২-তে আমাকে যুদ্ধাপরাধীর ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াতে হয়েছিল। সাহসিকতার সঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭১-এ ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলখানার গণহত্যার সম্পূর্ণ ইতিহাস। আর, ওই গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ৫ জনের মধ্যে আমিও একজন। হত্যা করা হয়েছিল একসঙ্গে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে। কিন্তু, এই সাক্ষীর কারণে আমার নিরপরাধী ছোটভাই মিরাজ খুন হয়ে যাবে এ আমি কখনোই বিশ্বাস করতে পারিনি। সরকারের কাছে বিচার চেয়েছি, বিচার পাইনি। আমি এখন ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারায় গৃহবন্দি থাকি, একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। এ এক অভূতপূর্ব করুণ অধ্যায়। একটি ঘরে ৬ বছর গৃহবন্দি থাকতে থাকতে আমি আজ উল্লেখযোগ্যভাবে অসুস্থ। আমার হার্টে ৮টা ব্লক ধরা পড়েছে। বাইপাস সার্জারি ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব না। এরই মাঝে কাউকে না জানিয়ে আমি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক এ সিসিইউতে চার দিন ভর্তি ছিলাম।
প্রিয় বন্ধুরা, আগামি ১০ দিনের মধ্যে আমি আমার হার্টের বাইপাস সার্জারি করাতে প্রস্তুত রয়েছি। কোনও সরকারী সাহায্য বা শিল্পী, বন্ধুবান্ধবের সাহায্য আমার দরকার নেই, আমি একাই যথেষ্ট (শুধু অপারেশনের আগে ১০ সেকেন্ডের জন্য বুকের মাঝে বাংলাদেশ এর পতাকা এবং কোরআন শরিফ রাখতে চাই)। আর, তোমরা আমার জন্য শুধু দোয়া করবে। কোনও ভয় নেই।’
এই স্ট্যাটাসটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার উন্নত চিকিৎসার নির্দেশনা পাঠান।
সেই একই রোগের কারণে হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন হাজারও জনপ্রিয় গানের এই ¯্রষ্টা।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আজ (২২ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দ্রুত তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (আয়েশা মেমোরিয়াল) নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।