ইন্দোনেশিয়ায় নিহত ২৮১, নতুন সুনামির আশঙ্কা

আর্ন্তজাতিক: ইন্দোনেশিয়ার আনাক ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত নতুন সুনামির সৃষ্টি করতে পারে আশঙ্কায় এর নিকটবর্তী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে সৈকত থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় সুনামির দুটি বিশাল ঢেউ সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের উপকূলীয় শহরগুলো গুড়িয়ে দেয়, এতে অন্তত ২৮১ জন নিহত ও ১,০১৬ জন আহত হয়েছেন বলে খবর বিবিসির।
ইন্দোনেশিয়ান জিওফিজিক্যাল এজেন্সির (বিএমকেজি) ধারণা, এই সুনামির সৃষ্টি হয়েছে ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সাগরতলে ভূমিধসের কারণে। এর সঙ্গে পূর্ণিমার প্রভাব যুক্ত হওয়ায় বিপুল শক্তি নিয়ে সৈকতে আছড়ে পড়েছে সুনামির ঢেউ।
রোববার আনাক ক্রাকাতাউয়ে ফের অগ্ন্যুৎপাত হয়ে ছাই ও ধোঁয়া উদগীরিত হয়েছে।
একটি ভাড়া করা বিমান থেকে নেওয়া ভিডিওতে সুমাত্রা ও জাভার মধ্যবর্তী সুন্দা প্রণালীর এই আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুৎপাতের তীব্রতা ধরা পড়েছে।ধ্বংসস্তুপে রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে, তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে হাতহতদের খোঁজে তল্লাশি অভিযানে সহায়তা করতে ভারী ক্রেন পাঠানো হচ্ছে।
সুনামির ঢেউয়ে পশ্চিম জাভার তানজুং লেসুং বিচ রিজোর্টসহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের কয়েকশ ভবন ধ্বংস হয়েছে, রাস্তায় ও প্রাঙ্গণে থাকা গাড়িগুলো ভেসে গেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, একটি রিজোর্টে প্যান্ডেল ঘেরা মঞ্চে ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় রক ব্যান্ড সেভেনটিন কনসার্ট চলার সময় বিশাল একটি ঢেউ এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিচ্ছে।
ঢেউয়ের ধাক্কায় মঞ্চ ভেঙে ব্যান্ডের সদস্যদের ভেসে যেতেও দেখা গেছে।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরও নুগরোহো এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আনাক ক্রাকাতাউ থেকে অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত থাকায় আরেকটি সুনামি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
“সৈকতে কোনো আয়োজন না করতে এবং কিছু সময়ের জন্য উপকূল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূপদার্থবিজ্ঞান সংস্থা,” বলেছেন তিনি।
১৯২৭ সালে ক্রাকাতোয়ার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আনাক ক্রাকাতাউ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই আগ্নেয়গিরিটির সক্রিয়তা বাড়তে থাকায় আগ্নেয়গিরিটির জ¦ালামুখের আশপাশের এলাকাগুলো এড়িয়ে চলার জন্য লোকজনকে বলা হয়েছিল।
সোমবার সুতোপো ধারাবাহিক কয়েকটি টুইটে এই সুনামির জন্য আগাম কোনো সতর্কতা কেন দেওয়া হয়নি তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার আগাম সতর্কতা জারির পদ্ধতিটি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু সাগরতলের ভূমিধস ও অগ্ন্যুৎপাতের বিষয়টি এর পর্যবেক্ষণের আওতার বাইরে যদিও এ দুটির কারণেও প্রাণঘাতী সুনামি সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্বের মোট আগ্নেয়গিরির ১৩ শতাংশ ইন্দোনেশিয়াতে হওয়ায় এ ধরনের পদ্ধতি গড়ে তোলা দেশটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
দুর্যোগের রাতে সুনামির আগাম কোনো সতর্কতা পদ্ধতি ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। তহবিলের অভাব, বয়াগুলো ভেঙে ফেলা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ২০১২ সাল থেকে কার্যকরী কোনো সুনামি সতর্কতা জারির ব্যবস্থা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ জেস ফিনিক্সকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, আগ্নেয়গিরি থেকে যখন অগ্ন্যুৎপাত হয়, ফুটন্ত লাভার কারণে ভূগর্ভের তুলনামূলকভাবে শীতল শীলাস্তর ভেঙে ভূমিধসের সৃষ্টি হতে পারে। আর ক্রাকাতাউয়ের একটি অংশ যেহেতু সাগরে নিমজ্জিত, সেখানে ভূমিধসের ফলে সুনামি সৃষ্টি হতে পারে।
আগ্নেয়দ্বীপ ক্রাকাতোয়ায় ১৮৮৩ সালে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ওই সময়ও ১৩৫ ফুট উঁচু ঢেউ নিয়ে সৈকতে আঘাত হানে সুনামি, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সে সময় সাগরে ভেসে যায়।
দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে ক্রাকাতোয়া (ইন্দোনেশিয়ায় ক্রাকাতাউ) আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত শুক্রবার ওই আগ্নেয়গিরি থেকে প্রায় সোয়া দুই মিনিট উদগীরণ হয়। এর ফলে পর্বতের ১৩০০ ফুট উঁচু পর্যন্ত ছাইয়ের মেঘ ছড়িয়ে পড়ে।
ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। বিশ্বের সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর অর্ধেকের বেশি রয়েছে যে এলাকায়, প্রশান্ত মহাসাগরের সেই ‘আগ্নেয় মেখলার’ মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান।
এর আগে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরের বালারোয়া ও পেতোবো এলাকায় অন্তত দুই হাজার মানুষের মৃত্য হয়।
আর ২০০৪ সালে সুমাত্রা দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামিতে ভারত মহাসাগরের উপকূলজুড়ে ১৪টি দেশের দুই লাখ ২৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!