ইন্দোনেশিয়ায় সুনামিতে নিহত ১৬৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালীর আশপাশের সৈকতে সুনামিতে অন্তত ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অন্তত ৭৪৫ জন। বিবিসির খবরে বলা হয়, গতকাল রাতে সুনামির পর থেকে অন্তত দুই ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। কয়েক ডজন ঘরবাড়ি এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর জানিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ান জিওফিজিক্যাল এজেন্সির (বিএমকেজি) ধারণা, এই সুনামির সৃষ্টি হয়েছে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সাগরতলে ভূমিধসের কারণে। এর সঙ্গে পূর্ণিমার প্রভাব যুক্ত হওয়ায় বিপুল শক্তি নিয়ে সৈকতে আছড়ে পড়েছে সুনামির ঢেউ। জাভা ও সুমাত্রা দ্বীপের মাঝখানে এই সুন্দা প্রণালীই জাভা সাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। অধিকাংশ মৃত্যুর খবর এসেছে ইন্দোনেশিয়ার পান্দেগলাং, দক্ষিণ লামপাং ও সেরাং এলাকা থেকে। কর্তৃপক্ষ বলছে, সুনামিতে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। উদ্ধারকর্মীরা দুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র সুনামির আঘাতের একটি ভিডিও টুইটারে দিয়েছেন। রাস্তায় পানির তোড়ে যানবাহন ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে সেখানে। গতকাল রাতের সুনামির প্রত্যক্ষদর্শী নরওয়ের আলোকচিত্রী ওইস্তেইন লুন্ড অ্যান্ডারসন বিবিসি জানান, বিপুল জলরাশি যখন উঠে আসতে শুরু করে, তিনি তখন পশ্চিম জাভার আনিয়ার সৈকতে ছিলেন। ক্রাকাতোয়ার উদগীরণের ছবি তোলার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। আর তার পরিবারের সদস্যরা হোটেলে ঘুমাচ্ছিলেন। সন্ধ্যায় ওই আগ্নেয়গিরি লাভা উগরে দিলেও রাতে সবই ছিল বেশ শান্ত। এর মধ্যেই হঠাৎ সাগর থেকে বিশাল এক ঢেউ সৈকতে উঠে আসতে দেখে উল্টো ঘুরে দৌড়াতে শুরু করেন অ্যান্ডারসন। তিনি বলছেন, সুনামির দুটি ঢেউ পরপর উপকূলে আঘাত হানে। এর মধ্যে প্রথমটি ততোটা জোরালো না থাকায় তিনি দৌড়ে হোটেলে ফিরতে সক্ষম হন।

হোটেলে ফিরে স্ত্রী আর সন্তানকে জাগানোর পরপরই দ্বিতীয় ঢেউ আসার শব্দ পান অ্যান্ডারসন। জানালা দিয়ে তিনি দেখতে পান, ওই ঢেউ ছিল প্রথমটির তুলনায় অনেক বড়। সেই বিপুল জলরাশি যখন হোটেল পেরিয়ে যাচ্ছিল, রাস্তায় থাকা গাড়িগুলোকে ভাসিয়ে নিচ্ছিল। এই পরিস্থিতির মধ্যে অ্যান্ডারসন এবং হোটেলের সবাই আতঙ্কে কাছে একটি উঁচু জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে সরে যান। আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ জেস ফিনিক্সকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, আগ্নেয়গিরি থেকে যখন অগ্ন্যুৎপাত হয়, ফুটন্ত লাভার কারণে ভূগর্ভের তুলনামূলকভাবে শীতল শীলাস্তর ভেঙে ভূমিধসের সৃষ্টি হতে পারে।

আর ক্রাকাতোয়ার একটি অংশ যেহেতু সাগরে নিমজ্জিত, সেখানে ভূমিধসের ফলে সুনামি সৃষ্টি হতে পারে। আগ্নেয়দ্বীপ ক্রাকাতোয়ায় ১৮৮৩ সালে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ওই সময়ও ১৩৫ ফুট উঁচু ঢেউ নিয়ে সৈকতে আঘাত হানে সুনামি, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সে সময় সাগরে ভেসে যায়।

দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে ক্রাকাতোয়া আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত শুক্রবার ওই আগ্নেয়গিরি থেকে প্রায় সোয়া দুই মিনিট উদগীরণ হয়। এর ফলে পর্বতের ১৩০০ ফুট উঁচু পর্যন্ত ছাইয়ের মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয়।

বিশ্বের সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর অর্ধেকের বেশি রয়েছে যে এলাকায়, সেই ‘আগ্নেয় মেখলার’ মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরের বালারোয়া ও পেতোবো এলাকায় অন্তত দুই হাজার মানুষের মৃত্য হয়।

আর ২০০৪ সালে সুমাত্রা দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামিতে ভারত মহাসাগরের উপকূলজুড়ে ১৪টি দেশের দুই লাখ ২৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!