এই কোয়ারেন্টিনে প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা বলুন

জীবনযাপন ডেস্ক: হাজার যান্ত্রিকতার মাঝে খুব কাছের মানুষগুলোকে, পরিবারের সদস্যদেরকে হয়তো কোনো দিন বলা হয়ে ওঠেনি ‘ভালোবাসি’। ভালোবাসা দিবস, মা দিবস বা বাবা দিবস- এসব তো উপলক্ষ মাত্র। এই কোয়ারেন্টিন জীবনে তাদের প্রায়ই বলুন ‘ভালোবাসি তোমাকে বা তোমাদের’। বাবা মা, কিংবা স্বামী-স্ত্রী, তাদের সাথে বছরের পর বছর এক ছাদের নীচে থাকলেও কখনো মুখ ফুটে এসব কথা বলা হয় না। আপনি তাদের জন্য বাইরে বা ঘরে সারাক্ষণ কাজ করছেন, খাবার এনে দিচ্ছেন, অসুখ হলে সেবা করছেন। কিন্তু ক’জন পারেন মনের কথাগুলো মুখ দিয়ে প্রকাশ করতে! আর এই না পারাটা অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করে।

বাবা-মা আপনাকে জন্ম দিয়েছেন। তাদের প্রতি ভালোবাসার কথা সন্তান যদি মুখ দিয়ে নাও বলেন, তবুও সন্তানের প্রতি তাদের স্নেহ-মমতার কোনো কমতি হয় না। তারপরও যদি সন্তান বাবা-মাকে ভালোবাসার কথা জানায়, দেখবেন তারা কতটা আবেগী হয়ে ওঠেন। আর সংসার জীবনে সঙ্গি-সঙ্গিনীর সম্পর্কটা আবার ভিন্ন। এদের মধ্যে সামান্য ভালোবাসার কমতি হলে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে।

এবার স্বামীদের জন্যে কিছু বলি। সারাদিন যতোই বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকেন না কেন, বাড়িতে একবার ফোন দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন। তাকে জিজ্ঞেস করুন- আজ কী রান্না করেছো? তোমাকে খুব মিস করছি কিংবা বলতে পারেন আজ তৈরি হয়ে থেকো, সন্ধ্যায় আমরা বাইরে খাবো। যদিও এই করোনার মহামারীতে বাইরে যাওয়ার চিন্তাও করবেন না। সব চাইতে বড় কথা স্ত্রীর জন্মদিন এবং আপনাদের বিবাহবার্ষিকী- এই দুটো বিষয় ভুলেও ভুলে যাবেন না। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন দরকার হলে, সময় মতো সারপ্রাইজ দিন। গৃহস্থালীর হাজারো ঝঞ্ঝাট আর বাচ্চাদের অবুঝ অত্যাচারের ভিড়ে আপনার এ কথাগুলোই স্ত্রী-সন্তানকে প্রশান্তি এনে দিতে পারে। এই সহজ উপায়ে পুরনো সম্পর্কটাকে সুযোগ বুঝে ঝালাই করে নিন।

এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর দায়িত্বও কিন্তু কম নয়। আপনি কর্মজীবী বা গৃহকর্ত্রী যেই হোন না কেন অফিস থেকে স্বামী ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরলে নিজের জন্য এবং তার জন্য দুকাপ চা নিয়ে মুখোমুখি বসুন। অবশ্যই নিজেকে অগোছালো করে রাখবেন না; ফ্রেশ হয়ে নিন। আমরা জানি, আপনাকে ঘরে-বাইরে হাজারটা দিক সামলাতে হয়। কিন্তু তারপরও হাসিমুখে দুজন সারাদিনের রোজনামচাটা সংক্ষেপে ঝালাই করে নিতে পারেন। বিশেষ করে গৃহকর্ত্রীরা ওই সময় জি বাংলাটা বন্ধ রাখুন। ওই এক সিরিয়াল তিন বার করে টেলিকাস্ট হয়।

আর কর্তারা আপাতত ক্রিকেট দেখাটা বন্ধ রাখুন। ওটার হাইলাইটস পরে দেখলেও চলবে। দুজন বসে দশ মিনিট গল্প করে নিন। দেখবেন নিজেদের মধ্যে ভালোলাগাটা আরো বেড়ে গেছে। গল্পের বিষয়বস্তু যাই হোক, যেন কোনো বিষয়ে কেউ কারো বিরুদ্ধ না চলে যান। একে অপরকে আনন্দ দেওয়াই যেন এই দশ মিনিটের মূল লক্ষ্য হয়। হাতের মুঠোয় ধরে রাখা মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখুন, যেন মনোযোগ অন্যদিকে না চলে যায়।

আর এই সবগুলো ফর্মুলাই যদি ফেল করে ফেলে তাহলে বুঝবেন, সময় এসেছে নিজেদের পুরনো সম্পর্কের পুরু মরচে বেশ যত্নের সাথে পরিষ্কার করা। সুযোগ করে নিতে পারলে দুজন মিলে ঘুরতে চলে যান। আর বাচ্চারা যদি বড় হয় এবং দাদা-দাদি বা নানা-নানির কাছে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে, তো ওদের রেখে যান। এই সময়টা শুধু নিজেদের হবে। যে কথাটা বলি বলি করেও কখনো বলা হয়নি তাই বলে দিন মুখ ফুটে, জমানো সব ইগো থেকে বেরিয়ে আসুন।

সারা সপ্তাহের বাজার লিস্ট, কাজের বুয়ার বেতন, বাচ্চার স্কুলের ফি, অমুকের কল কেন এলো তোমার মোবাইলে- এইসব আলাপ থেকে অনেক দূরে চলে যান। শুধু বলুন তাকে কতটা ভালোবাসেন আপনি। সঙ্গি-সঙ্গিনীকে বুঝতে দিন তিনি আপনার জীবনের মহা মূল্যবান একজন, তাকে ছাড়া আপনি অসম্পূর্ণ। এটা হয়তো আপনি অনেক বার বিভিন্ন কাজ দিয়ে বুঝিয়েছেন, কিন্তু মুখে শোনার মধ্যে তৃপ্তি আছে।

তবে অবশ্যই কথাটি যেন সত্য উপলব্ধি হয়। কেননা মিথ্যা দিয়ে গড়া যেকোনো সম্পর্ক এক দিন না একদিন ভেঙে যাবে। হোম কোরেন্টাইন চলছে। ইচ্ছে করলেও বাইরে বের হবার কোনো সুযোগ নেই। তাই অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে কাছের মানুষকে সময় দেবার জন্য এর চাইতে উপযুক্ত সময় আর হয় না। কে বলতে পারে আমরা কে কবে কোথায় নাই হয়ে যাই, তাই মনের ভেতর জমিয়ে রাখা সেই প্রিয় শব্দটিকে আজই কাজে লাগান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!