‘এতো মানুষ সাহায্য আমার কেউ খোঁজ কেউ লয় না’
পিপ (পাবনা) : লাইলী বেওয়া, বয়স প্রায় ষাট বছর। স্বামী মৃত আকেম আলী, বাড়ি পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের উত্তর সারুটিয়া গ্রামে। চার মেয়ে ও দুই ছেলে সন্তানের মা হওয়া সত্বেও এখনো কোনো কোনো সময় না খেয়ে দিন পার করতে হয়। কারণ কোনো সন্তানই তাকে ভাত কাপড় দেয় না। আবার এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণও পান নি। তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এতো মানুষ সাহায্য পায় কিন্তু তার খোঁজ যেনো কেউ নেয় না।
লাইলী বেওয়া জানান, স্বামী মৃত আকেম আলী মারা গেছেন প্রায় ছয় বছর আগে। সে ইলেক্টিশিয়ানের কাজ করত। তার চার মেয়ে দুই ছেলে। সবাই বিবাহিত। ছেলে দুইটা ঢাকাতে থাকে। বড় ছেলেটা রাজ মিস্ত্রীর কাজ করে। আর ছেটো ছেলেটা সেলুনের কাজ করে। তারা যা রোজগার করে তাদেরই নাকি সংসার চলে না। তাই তারা কেউ তার খোঁজ লয় না। তিনি নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করত। কিন্তু নিজের অসুস্থ্যতা ও করোনা ভাইরাসের কারণে তারাও আর কাজে নেয় না। ফলে কোনো কোনে দিন তাকে না খেয়েও দিন পার করতে হচ্ছে। আবার শুনছি ভাইরাসের কারণে সরকার এতো সাহায্য দিতেছে কিন্তু তারা তো কেউ কিছুই দেয় না। এমন করে লাইলী বেওয়া তার মনের অভিব্যক্তি গুলি প্রকাশ করছিল। তিনি আর বলেন, তার নাম লেখে নিয়ে যায়, কিন্তু কম্পিউটারে নাম ডিলিট হয়ে যায়। তাই সে কোনো সাহায্য পায়নি।
ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার ৪নং ওয়াডের উত্তর সারুটিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় একটি ঝুপড়ি দোচালা ঘরে বাসবাস করেন লাইলী বেওয়া। ঘরের চালা ভাঙ্গা বৃষ্টিতে চালা দিয়ে পানি পড়ে ঘরের মেঝতে। উঠানে দূর্বা ঘাস গজিয়েছে। তিনি বলেন,‘স্বামীর মৃত্যু হয়েছে প্রায় ছয় বছর। তার মৃত্যুর পর থেকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছি। সেখান থেকে যা পেয়েছি তাই দিয়ে সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন বয়স হয়েছে। তাই আর কাজ করতে পারি না। তার পর আবার প্রেসার ও গ্যাসের অসুখ তো আছেই। তাই পাড়া প্রতিবোশী সাহায্য করলে তার চুলায় হাড়ি চরে না করলে না। কোনো কোনো দিন সে না খেয়েই দিন পর করে। তবে তিনি আক্ষেপের সুরে আরও বলেন, তারা সরকারের কাছে জন প্রতিনিধিরা নাকি সাহায্যের জন্য আমার নাম পাঠায় কিন্তু কম্পিউটারে ডিলিট হয়ে যায়। সবার নাম থাকে আর আমার নামই ডিলিট। আমি আর কি কবো।’
অপরদিকে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহায় দিন মজুরদের ত্রাণের জন্য মোবাইল নং দিয়ে যোগাযোগ করতে বল হয়েছে। ওই সকল নাম্বারে নিয়ম মেনে ফোন দিলেও সব ফোন ধরে না। কিন্তু ত্রাণ বঞ্চিত অনেকের অভিযোগ ত্রাণের জন্য তালিকা তৈরি করার সময় মুখ চিনে চিনে করা হয়েছে। তাই প্রকৃত দরিদ্রদের মধ্যে এখনো অনেকে ত্রাণ পান নি।
অথচ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপজেলা এখন পর্যন্ত ত্রাণের জন্য ৫১.৪৫০ মে.টন চাল ও ২ লাখ ৮হাজার ৪০ টাকা অনুদান পাওয়া গেছে যা ত্রাণ বিতরণ বর্তমানে চলমান রয়েছে।