করোনাকালে স্বাস্থ্য সুস্থতার নিয়ামত যেভাবে কাজে লাগাতে হবে
ধর্মপাতা: মো. ইমামুল ইসলাম সেলিম : সুস্থতা মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর অন্যতম দান। প্রত্যেক মানুষই সুন্দর ও সুখী জীবনযাপনের ইচ্ছে পোষণ করে থাকে। তবে কেউ সফল হয় আর কেউ হয় না। হাদিস শরিফে সুস্থতার নিয়ামতের সদ্ব্যবহারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের আগে গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবন, অসুস্থতার আগে সুস্থতা, দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতা, কর্মব্যস্ততার আগে অবকাশ এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৫৪৬০)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষ ধোঁকাগ্রস্ত হয় সুস্থতা ও অবসর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)
সুন্দর জীবনযাপন ও সুস্থ থাকার জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। কিন্তু অনেকেই এই ব্যাপারে অসচেতন। ফলে দুরারোগ্য ব্যাধি ও শারীরিক নানা জটিলতার সম্মুখীন হয়। হুঁশ ফিরে এলে নিজেকে শুধরে নিতে চায়, কিন্তু তত দিনে সময় শেষ। দেখা যায়, অনিয়মিত ও অপরিকল্পিত জীবনাচারের কারণে বহু সুস্থ ও সবল মানুষ একসময় বিছানায় কাতরাচ্ছেন, অথচ অর্থবিত্ত, উচ্চশিক্ষা, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি কোনো কিছুরই কমতি নেই তাঁর। সেই সময় জীবনের অর্জন ও ফলাফল নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধে।
অন্যদিকে বহু আত্মত্যাগী মানুষ সুস্থ থাকার তাগিদে পরিকল্পিত জীবনে অভ্যস্ত হয়। নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে তাঁরা সুখী-সুন্দর জীবনযাপন করে এবং এর সুফল তিনি, তাঁর পরিবার ও সমাজ ভোগ করে। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবেÑএটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুস্থ থাকা অবস্থায় সতর্কতামূলক সব নির্দেশনা ও ব্যবস্থাবিধি মেনে চলা উচিত।
গোটা পৃথিবী আজ করোনার করাল গ্রাসে বিধ্বস্ত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশের করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকার বিভিন্ন মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিচ্ছে। ভয়কে জয় করে সচেতন হওয়ার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছে। সেগুলো অবশ্যই আমাদের অনুসরণ করা উচিত।
যেমনÑঘরের বাইরে যথাসাধ্য কম যাওয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি ও কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, যেখানে-সেখানে বিশেষভাবে রাস্তায় থুথু না ফেলা, সামাজিক মেলামেশা পরিহার করা, বেশি বেশি পানি পান করা, কমপক্ষে চারবার রং চা পান করা, লেবুপানি পান করা, লবণমিশ্রিত গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা ইত্যাদি।
এসবের পাশাপাশি আরো কিছু সতর্কতামূলক বিষয় মেনে চলা যায়। যেমন ১. জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে ফিরে এসে জুতার তলায় অ্যান্টিভাইরাস মেশানো পানি দিয়ে স্প্রে করা এবং সরাসরি বাথরুমে গিয়ে কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করা। পাশাপাশি নিজে পরিচ্ছন্ন হয়ে বের হওয়া।
২. ঘরে থাকার দিনগুলোতে সংসারের কাজে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা। এতে শরীরচর্চার কাজও হবে।
৩. নামাজ-কালাম, দোয়া-দরুদ ও কোরআন-হাদিস চর্চা অব্যাহত রাখা।
৪. মোবাইল আসক্তি পরিহার করা।
৫. অন্ধকার ঘরে কাছ থেকে টিভি না দেখা। (যথাসাধ্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা)।
৬. পরিকল্পিত খাবার গ্রহণ করা। যেমনÑতৈলাক্ত খাবার পরিহার করা। মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া। শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
৭. সময় কাটে না বলে সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে না থাকা।
৮. পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিবাদে না জড়ানো এবং যথাসাধ্য হাসিমুখে থাকতে চেষ্টা করা।
৯. বয়স ও শারীরিক গঠনভেদে নিয়মিত ও পরিমিত ঘরের মধ্যে সকাল-বিকেল হালকা ব্যায়াম করা।
১০. বডি ম্যাসাজ শরীরের জন্য একটি উপকারী বিষয়। সম্ভব হলে নিজে, বয়স্কদের জন্য অন্যকে দিয়ে প্রেসার ম্যাসাজ, ইলেকট্রনিক ম্যাসাজ, হট ম্যাসাজ, কোল্ড ম্যাসাজ চালিয়ে যাওয়া। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
এখন বাইরে বের হওয়া যায় না এই অজুহাতে শরীরচর্চা বন্ধ রাখা যাবে না। কেননা এতে শরীরে নানা রোগ দানা বাঁধতে পারে। বিশেষত যারা ডায়াবেটিস, প্রেসার, স্থূলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত, তারা পরে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
জীবন ও পরিস্থিতি সব সময় একরকম যায় না করোনাভাইরাস তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। তাই অনিয়ম পরিহার করে সুন্দর জীবনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। পরিকল্পিত জীবনাচারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটা সব নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এতে শুধু করোনা নয়, অন্য রোগ থেকেও মুক্তি লাভ সম্ভব। সুস্থ, সুখী ও সুন্দর জীবনযাপন সম্ভব।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ক্রীড়া কর্মকর্তা, বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি