করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার গ্রীষ্ম থামাতে পারবে?
স্বাস্থ্য: উত্তর গোলার্ধে উষ্ণ আবহাওয়ার আগমনের পর সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, গ্রীষ্ম করোনাভাইরাস মহামারী বিস্তারের গতি কমিয়ে দিতে পারবে কি। এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন বিজ্ঞানীরাও। উষ্ণ আবহাওয়া এলে সাধারণত ফ্লুর মৌসুম শেষ হয়। কিন্তু জলবায়ু একা কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারেনি।
উল্টো উষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল ব্রাজিল এবং মিশরে প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। রয়টার্স জানিয়েছে, কীভাবে সূর্যের আলো, আর্দ্রতা এবং বাইরের বাতাস ভাইরাসের ওপর প্রভাব ফেলে – এ নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় আশাবাদী হওয়ায় কিছু কারণ পাওয়া যায়। নতুন এই করোনাভাইরাস কি মৌসুমী রোগ? ভাইরাসটি খুব বেশি সময় আগে আসেনি বলে এ নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সংক্রমণ যেমন ফ্লু এবং সাধারণ সর্দি মৌসুমকে অনুসরণ করে। শীতল আবহাওয়া, ঘরের ভেতর কম আর্দ্রতা এবং বাড়ির ভেতরে বেশি সময় ব্যয় করাসহ পরিবেশগত পরিস্থিতি তাই মহামারীর ছড়িয়ে পড়া ত্বরান্বিত করতে পারে।
করোনাভাইরাসের ওপর আবহাওয়ার প্রভাব সম্পর্কে কয়েক রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে। চীনের ২২১টি শহর নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং দিনের আলো মহামারী ছড়িয়ে পড়ার গতিকে প্রভাবিত করে না। আবার অন্য দুটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রভাব পড়ছে। ৪৭টি দেশে নতুন করে সংক্রমণ নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলের মতো অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে মহামারীর ছড়িয়ে পড়ার গতি কমার যোগসূত্র আছে।
১১৭টি দেশের ওপর করা আরেকটি গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মের সময় নতুন কোভিড-১৯ কেস কমতে পারে আর শীতকালে পুনরুত্থান দেখা দিতে পারে।” তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “আমরা এমন প্রত্যাশার ওপর নির্ভর করতে পারি না যে মৌসুম বা তাপমাত্রা এর (রোগের বিস্তার) উত্তর হবে।”
কেন গ্রীষ্ম এবং শীতকালে ভিন্নভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগ ছড়ায়? ব্রিটেনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজির বিশেষজ্ঞ সিমোন ক্লার্ক জানান, ঠা-া আবহাওয়া কাশি, সর্দি এবং ফ্লু ছড়িয়ে দেয় বলে ধরা হয় কারণ শীতল বাতাস নাকের ভেতরের জায়গা ও বায়ু চলার পথগুলোতে জ¦ালা সৃষ্টি করে। এর ফলে ভাইরাসের সহজে সংক্রমিত হতে পারে। শীতে মানুষ বাড়ির ভেতর বেশি সময় ব্যয় করে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক দল গবেষক দেখেছেন, গবেষণাগারের ভেতর তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বাড়ানো হলে পৃষ্ঠতলের করোনাভাইরাস মানুষকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা দ্রুত হারায়। আর সূর্যের আলোতে তারা আরও দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণা করে দেখছেন, রক্তে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী ভিটামিন ডি কারও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির ওপর প্রভাব ফেলে কিনা অথবা সংক্রমিত হলে কেউ কতটা অসুস্থ হয়ে পড়বেন তা প্রভাবিত করে কিনা। দেহের বেশিরভাগ ভিটামিন-ডি আসে ত্বকে সূর্যের আলো পড়ার প্রতিক্রিয়া থেকে।