করোনায় একদিনে ৪৫ জনের মৃত্যুর রেকর্ড, সর্বোচ্চ শনাক্ত ৩১৭১
এফএনএস: দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫ জন মারা গেছেন। এতে করোনায় মোট মৃত্যু হলো ৯৭৫ জনের। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ১৭১ জন। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১ হাজার ৬৭৫ জনে।
মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৬৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ২৫ হাজার ৫৯৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ১৭১ জনের মধ্যে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড।
ফলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১ হাজার ৬৭৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৫ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ৯৭৫ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৭৭৭ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৫ হাজার ৩৩৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৩৩ জনের বয়স ৫১ বছরের বেশি। মৃতদের তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, পুরুষ ৩৩ এবং ১২ নারীর মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১-২০ বছরের দুজন, ২১-৩০ বছরের দুজন, ৩১-৪০ বছরের পাঁচজন, ৪১-৫০ বছরের তিনজন, ৫১-৫০ বছরের ১৫ জন, ৬১-৭০ বছরের ১০ জন এবং ৭১-৮০ বছরের মধ্যে আটজন মারা গেছেন।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগে ২৮ জন, চট্টগ্রামে ১১, রাজশাহী, সিলেট ও রংপুর বিভাগে দুজন করে মারা গেছেন। করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে, অনেকেই বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুত করছেন করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য। যা ঠিক নয়। কারণ অক্সিজেন থেরাপি একটি কারিগরি বিষয়। দক্ষ চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কেউ অক্সিজেন রোগীকে প্রয়োগ করলে তা রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়ে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনা চিকিৎসার অনেক ক্ষেত্রে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হয়। যা বাসায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই জনসাধারণের নিকট অনুরোধ, আপনারা অযথা বাসায় অক্সিজেন কিনে মজুত করবেন না। কারণ তা বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে এবং হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগী অক্সিজেন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন, যা কাম্য নয়। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, অক্সিজেন থেরাপিতে প্রত্যেক মিনিটে কত এমএল অক্সিজেন যাবে, এটা শুধুমাত্র চিকিৎসকই নির্ধারণ করে দেন। একজন টেকনোলজিস্টই পারেন কীভাবে এই অক্সিজেন সিলিন্ডার মেজারমেন্ট হবে। কাজেই আমরা যেন নিজের বিপদ নিজে ডেকে না আনি। অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় দক্ষ চিকিৎসক এবং টেকনোলজিস্ট ব্যতীত ব্যবহার না করি। বাসায় অক্সিজেন মজুত করা থেকে বিরত থাকি। হয়তো আপনার নিকট কোনো আত্মীয় মজুত রাখার জন্য হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে ভুগতে পারে। তার অন্য কোনো অসুবিধাও হয়ে যেতে পারে। কাজেই আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, মেডিকেল জিনিসপত্র বাসায় অযথা মজুত করবেন না।
বরাবরের মতোই ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের সুরক্ষা নিজের হাতে। করোনাভাইরাসের ছোবলে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা চার লাখ নয় হাজার প্রায়। তবে সাড়ে ৩৫ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস।