করোনা পরিস্থিতিতে বেড়েছে মাদকের কারবার
এফএনএস: কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে মাদক উদ্ধার ও পাচারকারী গ্রেফতারের ঘটনা স্বাভাবিকের সময়ের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। করোনাভাইরাসে কারণে প্রায় সব অপরাধ কমলেও মাদকের মামলা প্রায় আগের মতোই রয়েছে এবং মাদক সরবরাহকারী চক্রটি সক্রিয় রয়েছে, বলছেন ঢাকার শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান। তবে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফনেটেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলছেন, সাধারণ ছুটিতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আগেই ‘রিদমেই’ চলছে। বাংলাদেশে মাদকের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইয়াবা ট্যাবলেট টেকনাফ সীমান্ত পথেই দেশে ঢোকে। পরে তা দেশের অন্য স্থানে যায়।
বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে ঘটার পর ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে চলছে লকডাউন। এতে সীমান্তও রয়েছে বন্ধ। অফিস-আদালত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধ করে এই সময়ে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা কিছুটা শিথিল হলেও এখনও চলছে। এর মধ্যে অন্য সব অপরাধ কমে যাওয়ার তথ্য থানা থেকে মিললেও মাদকের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেলেও মাদক কারবারিরা অন্য সময়ের মতোই ব্যস্ত, গ্রেফতারও হচ্ছে বেশি। মাদকবিরোধী অভিযানে সক্রিয় র্যাব বলছে, এই লকডাউনের মধ্যে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি মাদক কারবারি গ্রেফতার হয়েছে।
র্যাবের সদর দপ্তরের পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স) সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এ বছরের ১ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত এক হাজার ৫৩৫ জন মাদকারবারি গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৩টি ইয়াবা বড়ি, ২৩ হাজার ৯৫৬ বোতল ফেন্সিডিল, ১০ কেজি হেরোইন। তার আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে গ্রেফতার করা হয় ৯৮৬ মাদক কারবারিকে। আর উদ্ধার করা হয় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৪২টি ইয়াবা বড়ি, ১৬ হাজার ৭৩২ বোতল ফেন্সিডিল ও ১৪ কেজি ৮৩০ গ্রাম হেরোইন। সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, তুলনা করলে দেখা যায় বছরের প্রথম দুই মাসে যে কয়জন গ্রেফতার হয়েছেন, পরের দুই মাসে ছুটির সময়ে বেশি গ্রেফতার হয়েছে। আর উদ্ধার করাও হয়েছে বেশি ইয়াবা বড়ি।
লকডাউনের মধ্যে ১২ জন মাদক কারবারি ‘গুলি বিনিময়ে’ মারা যান বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এই সময়ে ‘জরুরি খাদ্য উৎপাদন করে নিয়োজিত’ স্টিকার সাঁটিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবার চালান ঢাকা, গাজীপুরে পাচারের সময় একটি চক্রের চারজনকে গ্রেফতারও করে র্যাব। সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এই ফাঁকা রাস্তা মাদককারবারীরা নানা কৌশল অবলম্বন করে মাদক সরবরাহ করতে চাইছে। আবার রাস্তা ফাঁকা থাকায় আমাদের চলাচল করতে ও তাদের গ্রেফতার করাও সহজ হচ্ছে। তাই গ্রেফতারও হচ্ছে বেশি।
এদিকে বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মার্চ ও এপ্রিল মাসে ৮০ কোটি ২৭ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৭০৩টি ইয়াবা বড়ি, ৬৩ হাজার ২৬৫ বোতল ফেন্সিডিল। বিজিবি সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্চ ও মে মাসে ৫২৭ জনকে গ্রেফতার করে; জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫৭৫। সাধারণ ছুটিতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আগের মতোই রয়েছে কি না- জানতে চাইলে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, অভিযান আগেই রিদমেই চলছে। বেশ কিছু বড় বড় চালান এর মধ্যে ধরা হয়েছে।
নাফ নদীতে রাতের বেলায় সাঁতার কেটে ইয়াবা আনার চেষ্টায় জড়িতরা আগের মতোই সক্রিয় বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে এই বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন মানুষের দেহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হচ্ছে। কারণ এই সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। তবে বিজিবি সদস্যরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তল্লাশি করছে।
অন্য অপরাধ কমলেও মাদক কারবারি গ্রেফতারের ঘটনা নিয়মিতই ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। ঈদের দিনও মোহাম্মদপুর থানায় মাদকের মামলা হয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কাজ করতে হচ্ছে পুলিশকে। তার মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযানের গতি কমেছে কি না- জানতে চাইলে ঢাকার শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে বেশি সময় দিতে পারছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, গত তিন মাসে বেশ কয়টি বড় বড় মাদকের চালান ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে মাদকের মামলা তেমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে সীমান্ত জেলাগুলোতে মাদক বেশি পাওয়া যাচ্ছে এবং মামলাও হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ২৫ হাজার ৩০৭টি মাদক মামলা হয়েছে। পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান সব সময় চালু রয়েছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।