কোভিড-১৯: বিশ্বকে একযোগে লড়তে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

 ডেস্ক : কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে লড়াইয়ের আহ্বান পুনরায় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড নেশন্স ইকোনমিক এ- সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এ- দি প্যাসিফিক (ইউএনএসক্যাপ) এর ৭৬ তম অধিবেশনে ভিডিও বার্তায় এই আহ্বান জানান তিনি। এই লড়াই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায়ও গতি আনবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। এই অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগরে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সহযোগিতা জোরদার করা। করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য প্রথমবারের মতো ইউএনএসক্যাপ’র কোনো অধিবেশন ভার্চুয়ালি হল।

এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের কথা ছিল। তিনি ভিডিও বার্তাতেই সেই বক্তব্য তুলে ধরেন। ভিডিও বার্তায় তিনি জাতিসংঘ সংস্থার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য সমুদ্র বিষয়ক মৌলিক তিনটি প্রস্তাব করেন। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি এই ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে, মহামারীটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার পরিবর্তনের উপর কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছে।

আমাদের একসাথে এই মহামারী মোকাবেলা করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এসকাপ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে সমুদ্র সংক্রান্ত কিছু মৌলিক সমস্যার সমাধানে জোর দেন। এগুলো হচ্ছে: প্রথমত, ব্লু ইকোনমিতে উন্নত দেশগুলো থেকে জ্ঞান, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, অবৈধ, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকার প্রতিরোধ, প্রতিরোধ ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রচলিত প্ল্যাটফর্ম নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৎস্য উন্নয়নে যৌথ গবেষণা। তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় আবাস এবং জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষা করা এবং ম্যাপিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিচিতি শুরু করা। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সম্পদের সর্বশেষ ঠিকানা হিসেবে মহাসাগর এবং সাগর আমাদের জীবন-ধারণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, পরিবেশগত দূষণকারীরা সামুদ্রিক খাদ্য-ওয়েবের প্রধান অন্তরায় এবং সমুদ্রগুলোর সম্পদ ব্যবহারের টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সম্পদ দক্ষতার পথে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একীভূত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী এর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, তার সরকার দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে ‘ব্লু ইকোনমির’ প্রবৃদ্ধিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এবং টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং মিঠা পানির ও সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায় অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং এসক্যাপে স্থায়ী প্রতিনিধি মো. নাজমুল কওনাইন ৭৬তম কমিশনের সভাপতির পদে নির্বাচিত হয়েছেন। থাইল্যান্ড সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়।

অধিবেশনে ভাষণে কওনাইন বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রেখে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করায় এসক্যাপের ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক কর্মকা- এবং সহযোগিতা এবং ইউএনএসক্যাপের কার্যক্রমে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা, ফিজির প্রধানমন্ত্রী জসাজা ভোরেক বাইনিমারামা এবং টুভালু’র প্রধানমন্ত্রী কৌসিয়া নাটানো ও উদ্বোধনী অধিবেশনে ভিডিও বার্তা পাঠান। অধিবেশনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো কোভিড-১৯ মহামারীর আর্থ-সামাজিক প্রভাব মোকাবেলায় সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে এবং একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

অধিবেশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র বিষয়ক ইউনিটের সচিব মো. খুরশেদ আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিভিন্ন বিষয় এবং কমিশনের কাজকর্মে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!