ক্রিকেটের জয় উদযাপন যখন অপরাধ

বিদেশ : বিশ্বের লাখ লাখ দর্শকের মতো নাফিসা আত্তারিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বুঁদ হয়ে দেখেছিলেন। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর উদয়পুরের এই স্কুল শিক্ষকও অন্যান্যের মতো পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে ভারতের বিশাল জয়ের সাক্ষী হন। সমস্যা তৈরি হয় যখন পরদিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যায়। তার অপরাধ তিনি হোয়াটসঅ্যাপে পাকিস্তানের জয় উদযাপন করে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। অন্য আরও অনেক ভারতীয় মুসলিমের মধ্যে তিনিও একজন যাকে ওই ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্য আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়। বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ভারতে এই ঘটনায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। খবর বিবিসি অনলাইনের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই আটক বা গ্রেপ্তারের ঘটনা হলো হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুসলিম সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের নতুন ধরন। যদিও সরকার জোরের সঙ্গে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আত্তারি তার হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ছবির সঙ্গে ‘জিতে গেছি আমরা জিতেছি’ লিখেছিলেন। তার স্ট্যাটাসটি প্রথমে তার এক ছাত্রের বাবা-মায়ের চোখে পড়ে। তারাই পরে সেটি অন্যদেরকে পাঠান এবং পরে তা ভাইরাল হয়। এই ঘটনার পর তাকে স্কুলের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের অনুচ্ছেদের আওতায় আটক করা হয়। তার ওই পোস্টকে জাতীয় ঐক্য নষ্টকারী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আত্তারিকে খুব বিধ্বস্ত মনে হচ্ছিল এবং তিনি তার পোস্টের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমার স্ট্যাটাসের উত্তরে কেউ একজন আমাকে মেসেজ দিয়ে জানতে চেয়েছিল আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করি কীনা। ওই মেসেজে ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং আমি ভেবেছিলাম মজার জন্য এমন প্রশ্ন করা। তাই আমি হ্যাঁ বলেছিলাম। তার অর্থ এই নয়, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করি। আমি একজন ভারতীয়। আমি ভারতকে ভালোবাসি। পরে অবশ্য তার জামিন হয়েছে এবং স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে তিনি বাসায় ফিরেছেন। তবে তিনি ওই অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। আত্তারির আইনজীবী বলেন, পুলিশ যা করেছে তা সম্পূর্ণ ভুল করেছে। যদি কেউ কোনো ভুল করে বা যদি আপনি কারও সঙ্গে একমত না হন তাহলে তা কোনো অপরাধ নয় বা দেশবিরোধী নয়। এটা আমাদের সংবিধান ও আইনবিরোধী। এমন ঘটনা এবারই প্রথম না। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে। ২০১৪ সালে উত্তর প্রদেশে ৬০ কাশ্মীরি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থনের কারণে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও পরে দেশটির আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওই অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় মনস্তত্ত্বে ক্রিকেট সব সময় বড় কিছু। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায় বয়স্কদের ৫৬ শতাংশ ভারতীয় খুব গভীরভাবে বিশ্বাস করে একজন খাঁটি ভারতীয়ের নিজ দেশের দলকে সমর্থন করা উচিত। শারদা উগরা নামে এক ক্রিকেট সাংবাদিক ও সামাজিক ধারাভাষ্যকার প্রশ্ন করেন, আইনে কখন বিপক্ষ দলকে সমর্থন করা অপরাধ? যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূতদেরকে কি ভারতকে সমর্থন করার দায়ে গ্রেপ্তার করা উচিত? এটা অবশ্যই ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করা এবং দুই পক্ষকেই উসকে দেওয়া। একই ধরনের ঘটনা পাকিস্তানেও অবশ্য ঘটে। যেমন ২০১৬ সালে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির ফ্যান এক পাকিস্তানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কারণ তিনি কোহলিকে ভালোবেসে ভারতীয় পতাকা উড়িয়ে ছিলেন। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে এই দুই জাতিই খুব আবেগী হয়ে পড়ে। তবে ভারতের সাম্প্রতিক এই গ্রেপ্তারে অনেকেই মনে করছেন দেশটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খুব দ্রুত খর্ব হয়ে আসছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!