‘ঘুষ’ হিসেবে ভিডিও করে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম কে ফাঁসানোর চেষ্টায় তদন্ত কমিটি গঠন
পাবনা প্রতিনিধি : অভিযোগকারী গ্রাহকের দাবী মোটা টাকা ঘুষ গ্রহণ আর পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে (ডিজিএম) বকেয়া টাকা দিয়ে সেটিকে ‘ঘুষ’ হিসেবে ভিডিও করে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। এই ভিডিওটি সামাজিক যোগগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়ার পর দেখা দেয় তোলপাড়। নানা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর রোববার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাজ্জাদুর রহমানকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আকমল হোসেন রোববার সন্ধ্যা সাতটায় এ প্রতিবেদনকে মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় থেকে ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানকে শোকজ পরবর্তী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানকে ময়মনসিংহ সুপারিনটেন্ডেন্ট কার্যালয়ে কোন দায়িত্ব ছাড়াই সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঘটনাটি নাটক ও মিথ্যা দাবী করে ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান ঈশ^রদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি ঈশ^রদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেটা তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঈশ^রদী থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ ও পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জোনাল অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে দাশুড়িয়া পুরাতন ট্রাফিক মোড় এলাকার আনিছুর রহমান ওরফে হামেজ উদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম রানা ৩/৪ জন সহযোগী নিয়ে অফিসে যান। সেখানে ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডিল নিয়ে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাজ্জাদুর রহমানকে উৎকোচ প্রদানের অভিনয় করে ভিডিও করার চেষ্টা করেন। ঘটনা বুঝতে পেরে আমিনুল ইসলামকে ধরার চেষ্টা করলে আমিনুল ইসলামসহ তার সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
এদিকে অফিস সুত্রে জানা গেছে, আমিনুল ইসলাম দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের একজন খেলাপী গ্রাহক। তার বাবার নামে ৯ লাখ ৩ হাজার ৯৪৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাজ্জাদুর রহমান রোববার বেলা ১১ টায় জানান, ওই গ্রাহকের ৯ লাখ টাকার বেশি বিল বকেয়া রয়েছে। তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আমিনুল ইসলাম আদালতে রীট করলে আদালত তাকে ৬ মাসের মধ্যে বিল পরিশোধ করার নির্দেশনা দেয়। আমরা ৬ মাসের মাসিক কিস্তিতে বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে দেই। কিন্তু তিনি বিল পরিশোধ না করে উল্টো আমাকে দেখে নেবার নানারকম হুমকি ধামকি দেন। পরে নতুন সংযোগ নিতে এসে আমরা বলি আগের বিল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তখন তিনি টাকা বের করে আমাকে দেন। আমি টাকা নিয়ে তাকে বলি টাকাটা ক্যাশ কাউন্টারে জমা দেন। এসময় তাদের কয়েকজন মোবাইলে ভিডিও করে সেটিকে ‘ঘুষ’ হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করছে। পরে ওইদিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে খেলাপি গ্রাহক আমিনুল ইসলাম রানা গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি ঘুষ গ্রহণের কান্ড হলেও নিজের আত্ম রক্ষার্থে ডিজিএম মিথ্যাচার করছেন। উল্টো আমাদেরকে ফাঁসানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠিন শাস্তির দাবী করছি।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পবিস-১ এর জোনাল অফিসের ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।