চাটমোহরে দুর্ভোগে সেতুর অভাবে বাঁশের চারাটে পারাপার
নিজস্ব প্রতিবেদক, চাটমোহর : পাবনার চাটমোহর উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামে গুমানী নদীতে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই পাড়ের ১৫টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। দীর্ঘ বছরেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়রা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে বাঁশের চারাট তৈরি করেছেন। সেই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন হাজারো মানুষ।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের চারাট দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী ও এলাকার সাধারণ মানুষ। যাতায়াতের পথ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের চারাট দিয়ে অনেক কষ্টে প্রতিদিন যাতায়াত করে সবাই। এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো কাজ হয়নি। এতে সবার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুমানী নদীর তীরে রয়েছে একটি হাট, ধানকুনিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধানকুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, একটি মাদ্রাসা ও কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়া দুই পাড় মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ১৫ টি গ্রাম।
সবগুলো গ্রাম মিলিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করেন প্রায় ষাট হাজার মানুষ। সেতুর অভাবে বিন্যাবাড়ি, গৌরনগর, বরদানগর, লাঙলমোড়া, চরনবীণ, কুকড়াগাড়ি, কাটেঙ্গা, উত্তর সেনগ্রাম, দক্ষিণ সেনগ্রাম, নটাবাড়িয়া, মামাখালিসহ প্রায় পনেরটি গ্রামের মানুষ বর্ষকালে খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হলেও শুকনো মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের চারাটে পারাপার হয়ে থাকেন। বিপদে পড়তে হয় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াতকারী শিশু শিক্ষার্থীদের। সেতুর অভাবে ওই এলাকায় কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।
এদিকে কোনো যানবাহন গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে না পারায় বেশি বিপাকে পড়তে হয় অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার সময়। আর উপজেলার বেশির ভাগ কৃষি জমি ওই এলাকায় হওয়ায় কৃষকদেরও আবাদকৃত ফসল হাটে-বাজারে নিয়ে যেতে পারেন না। তাই ঘরে বসেই ফরিয়াদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হয়। আর বাঁশের ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারপার হতে গিয়ে পড়ে গিয়ে প্রায়শই বিভিন্ন যানবাহন চালকরা দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। দূর্ঘটনার শিকার হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে দূর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন।
গৌর নগর গ্রামের নাজমুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, প্রতিবার নির্বাচনের সময় আসলে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে আর কোনো খবর নেন না। আমাদের কষ্ট তেমনই থেকে যায়।
ধানকুনিয়া গ্রামের ফিরোজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, বৃষ্টির দিনে বাঁশের চারাটটি পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এ সময় শিশুরা স্কুলে যাতায়াত করতে গিয়ে এবং মোটর সাইকেল চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীতে পড়ে যায়। এছাড়া রোগী পারাপার করতেও অনেক কষ্ট হয়। তাই সেখানে একটি সেতু নির্মাণ করা খুব জ্বরুরী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খোকন বলেন, ‘সেতুর অভাবে সত্যিই ওই এলাকার মানুষের খুব কষ্ট হয়। অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছি। এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে এমপি মহোদয় সেখানে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
শনিবার দুপুরে জানতে চেয়ে উপজেলা প্রকৌশলী রাজু আহম্মেদ-এর মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন,‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে জেনে আমি ডিসি স্যারকে জানাব এবং অতিসত্তর ব্যবস্থা নেব।’