চাটমোহরে বানিজ্যিকভিত্তিতে কমলা ও ড্রাগন চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহরের সমতলে শুরু হয়েছে কমলা চাষ। কেবল কমলাই নয়; প্রচলিত ফল ফসলের পাশাপাশি বানিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন, স্কোয়াশ, ক্যাপসিকাম, মাল্টাও চাষ হচ্ছে। সাড়ি সাড়ি ড্রাগন গাছ সিমেন্টের খুটির সাথে বাঁধা। নিচে স্কোয়াশ চাষ হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে। কমলা, মাল্টা গাছের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে পেঁপে ও টমেটো। বিভিন্ন জাতের আম, বড়ই এর পাশাপাশি জমির চার পাশ দিয়ে লাগানো হয়েছে লেবু গাছ। সাড়ি সাড়ি ক্যাপসিকাম গাছের উপরে তৈরী হচ্ছে ছাউনী। পাবনার চাটমোহরের মুলগ্রাম ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামে ৩২ বিঘা জমির উপর কৃষি খামার করে এসব ফল ফসল চাষ করছেন মুলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বকুল।

পুরো নাম মোঃ রাশেদুল ইসলাম বকুল হলেও এলাকার সবাই তাকে বকুল চেয়ারম্যান বলেই চিনেন। পাবনার চাটমোহরের মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। বয়স ৪৩ বছর। তিনি উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের মৃত বেলায়েত আলী প্রাং এর ছেলে। কৃষিতে অধিক পরিমান রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ফল-ফসলের আমদানী নির্ভরতা হতাশ করে তাকে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হন তিনি। তার খামারে ত্রিশ জন মানুষের কর্ম সংস্থান হওয়ায় উপকৃত হচ্ছে এ ত্রিশটি পরিবার। পনেরো বছরের জন্য ৩২ বিঘা জমি লীজ নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বিশাল এই কৃষি খামার।

রাশেদুল ইসলাম বকুল জানান, দশ হাজার টাকা বিঘা হিসাবে ৩২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাস তিনেক হলো খামারের কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ৬শ ৫০ টি বারি-১ মাল্টা গাছ, ৪শ টি দার্জিলিং কমলা গাছ, ৩শ টি চায়না কমলা গাছ, ৩শ টি থাই কাটিমন আম, ১শ টি ব্যানানা ম্যাঙ্গো, ১শ টি কিউজাই আম, ১ হাজার টি বারি-৪ পেয়ারা, ৫শ টি অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী বড়ই, ১ হাজার টি ড্রাগন গাছ লাগিয়েছি। এছাড়া ৮শ পেঁপে গাছ, ১ হাজার ৬শ টি চায়না লেবু গাছ, ১ হাজার ৫শ থাই লেবুসহ মিষ্টি কুমরা, শশা, দেশি লাউ, ইন্ডিয়ান বোনা মরিচ, বগুড়ার মরিচ চাষ করেছি। জমি লিজসহ ইতিমধ্যে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। খামারটি ১শ বিঘায় রুপান্তর এবং ১শ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করার ইচ্ছা আছে আমার। বিশুদ্ধ সবজি উৎপাদন করার চেষ্টা করছি। অল্প পরিমানে রাসায়নিক সার ব্যবহারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করছি। আধুনিক কৃষিতে গ্রামের কৃষকদের উৎসাহিত করা এবং ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমি চারা ও বীজ সংগ্রহ করছি।

তিনি আরো জানান, চেয়ারম্যান হিসেবে যে ভাতা পাই তা খুব বেশি নয়। এ পদে থেকে টাকা উপার্জন করতে গেলে গরিবের পেটে লাথি মারতে হয়। আমি সেটা করতে চাই না। তাই অনেক ভেবে চিন্তে সৎপথে থেকে টাকা উপার্জনের চিন্তা থেকে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হই। আমি কৃষি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাই। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা পালন করতে জমির সঠিক ব্যাবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ জানান, আমি খামারটি পরিদর্শন করেছি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি উন্নত জাতের চারা আনছেন। বাইরে থেকে যে মাল্টা কমলা গুলো আসে তার পচন রোধে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। ফলে সেগুলো খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। পক্ষান্তরে চাটমোহরের মাঠে এসব ফল ফসল উৎপাদন হলে তা কম দামে পাওয়া যাবে এবং সহজলভ্য হবে। ভিটামিনের অভাব পূরণের পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এ খামার দেখে উঁচু জমির মালিকেরা এমন কৃষি খামার করতে উদ্বুদ্ধ হবে। এ খামারে বেশ কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সামগ্রীক ভাবে বলা যায়, তার ডিজিটাল কৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!