চাটমোহরে লিচু বাগানে মুকুলের সমারোহ : পরিচর্চায় ব্যস্ত চাষীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : লিচু উৎপাদন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার কয়েকটি গ্রাম। এ গ্রামগুলো লিচু গ্রাম হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই লিচু উৎপাদনে যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছে। এ উপজেলায় ক্রমান্বয়ে লিচু বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে।
লিচু গ্রাম হিসেবে খ্যাত উপজেলার রামচন্দ্রপুর,জালেশ^র,মল্লিকচক,গুনাইগাছা,নতুনপাড়া, পৈলানপুর,জাবরকোলসহ আশেপাশের গ্রামের লিচু গাছগুলো ভরে গেছে মুকুলে-মুকুলে। বাগান পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। মৌমাছির গুঞ্জন,মুকুলের সুগন্ধ, নয়নাভিরাম দৃশ্য মোহিত করছে পথচারীসহ এলাকাবাসীর মন।
লিচু চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অধিকাংশ গাছেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচুর বাম্পার ফলন হবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ফুল থেকে লিচু গুটি আকৃতি ধারণ করবে। তাই গুটি যেন ঝরে না যায় সেদিকে নজর রাখছেন বাগান চাষীরা। গুটি ঝড়া রোধকল্পে অনেকে বাগানে সেচ দিয়েছেন।
জানা গেছে,প্রায় ২২ বছর পূর্বে এ এলাকায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ শুরু হয়। লাভজনক হওয়ায় অনেকে প্রথম দিকে মিশ্র ফল বাগান হিসেবে কলা বাগানে লিচু চাষ শুরু করে। লিচু গাছ বড় হয়ে গেলে অন্যান্য গাছ কটে ফেলা হয়। তারা আরও জানান,লিচু বাগান শুরুর দিকে গাছ ছোট থাকা অবস্থায় কয়েক বছর সাথী ফসলের চাষ করা যায়।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের লিচু চাষী শামীম সরদার,লিয়াকত হোসেন পিন্টু ও জালেশ^র গ্রামের ওয়াজেদ আলী মাষ্টারসহ অনেক লিচু চাষী জানান,গাছে মুকুল আসার পূর্বে কীটপতঙ্গ মাকড়োশা দূরীকরণে স্বল্প পরিমান বালাইনাশক স্প্রে করা হয়। প্রতি বছর এ এলাকায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হয়।
এলাকার চাহিদা মেটানোর পর লিচু ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ হয়। কয়েক ধাপে বিক্রি হয় লিচুর বাগান। গাছে মুকুল আসার পূর্বেই অনেকে ৩/৪ মাসের জন্য বাগান বিক্রি দেন লিচু ব্যবসায়ীদের কাছে। অনেকে লিচু গুটি হবার পর বিক্রি করেন। লিচু পাকার পূর্বেই কয়েকবার পরিবর্তন হয় বাগানের মালিকানার। অনেক বাগান মালিক অধিক লাভের আশায় নিজেরাই পরিচর্যা করেন। অনেক সময় প্রখর খড়ায় লিচুর আকার ছোট হয়ে যায় আবার অনেক সময় বৈশাখী ঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় লিচু বাগান। তখন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল ইমরান জানান,চলতি মৌসুমে ৩৪০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর এ এলাকায় লিচু চাষ বাড়ছে ২০/২৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।