জোড়া মাথা আলাদা হয়ে বাড়ি ফিরলো রাবেয়া-রোকাইয়া: ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক : চিকিৎসা শেষে জোড়া মাথা আলাদা হয়ে সাড়ে তিন বছর পর বাড়িতে ফিরলো আলোচিত রাবেয়া-রোকাইয়া। সোমবার (১৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছার পর তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন স্বজন-প্রতিবেশিরা। রাবেয়া-রোকাইয়াকে ফিরে পেয়ে আন্দন্দে উদ্বেলিত গোটা গ্রাম। জটিল অপারেশন আর দুশ্চিন্তা কাটিয়ে সুস্থ্য রাবেয়া রোকাইয়া বাড়ি ফেরায় খুশি সবাই। ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী ও চিকিৎসকদের। আগামীতে তাদের পরিবারের পাশে থাকার আশ^াস স্থানীয় প্রশাসনের।
২০১৬ সালের ১৬ জুন সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেয় জোড়া মাথার জমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। জন্মের পর থেকে দুশ্চিন্তা ভর করে শিক্ষক দম্পতি বাবা-মা রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুনের। কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। সেই খবর পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি দায়িত্ব নেন রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার। এরপর ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তির পর দেশী-বিদেশী অভিজ্ঞ চিকিৎসদের নিবিড় তত্তাবধানে চলে চিকিৎসা ও জটিল অপারেশন। দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর চিকিৎসা শেষে সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেলে বাবা-মায়ের মাথে বাড়ি ফেরে জোড়া মাথা আলাদা হওয়া রাবেয়া-রোকাইয়া। তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন স্বজন ও প্রতিবেশিরা।
স্বজন ও এলাকাবাসীরা বলেন, আমাদের বড় পাওয়া যে আমাদের পরিবার থেকে এত বড় একটি অস্ত্রোপচারে সফল হয়ে তারা দুজনই বাড়ি ফিরে এসেছে। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এবং তারা বাড়ি ফিরে আসায় তারা খুব আনন্দিত।
হতাশা কাটিয়ে নিজের সন্তানদের আলাদাভাবে ফিরে পাওয়ায় উচ্ছসিত রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা-মা।
রাবেয়া-রোকেয়ার মা তাসলিমা খাতুন বলেন, রাবেয়া-রোকাইয়ার মতো যদি ভবিষ্যতে আবারো জোড়া মাথার জমজ শিশু জন্ম নেয় তাহলে তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ থাকবে না।
রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাচ্চা দুটি যখকন জন্মগ্রহন করেন তখন খুব হতাশার মধ্যে ছিলোম। অনেকেই অনেক কুটু কথা বলত। কিন্তু এখন আমি আমাদের এই দুটি বাচ্চার জন্য সারা বিশে^র কাছে পরিচিত। আজ আমি বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তিনি সহযোগীতা না করলে আমাদের পক্ষে এতবড় ব্যায় বহুল খরচ করা সম্ভব হত না।
রাবেয়া-রোকাইয়ার বাড়ি ফেরার খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে যান স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ভবিষ্যতে পরিবারটির পাশে থাকার আশ^াস দেন তিনি।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈকত ইসলাম বলেন, রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা-মা যেহেতু শিক্ষক দম্পত্তি তাদেরকেও আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগীতা করা সম্ভব আমি করব। এবং আমরা এই পরিবারটির পাশে আছি এবং পাশে থাকব।
আর হাঙ্গেরী থেকে আসা সাংবাদিক রিচার্ড ফুক্স জানান, বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরীর বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের কারণে রাবেয় রোকাইয়া আজ সুস্থ্য। ২০১৭ সাল থেকে তাদের ফলো করছেন তারা। আগামীতেও এমন সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
রাবেয়া-রোকাইয়া ও তার পরিবারের এমন আনন্দ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।