জ্বালানি কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে ফ্রান্স সরকার?
ডেস্ক: তুমুল বিক্ষোভের মুখে জ্বালানি কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফরাসি সরকার। মঙ্গলবার ফ্রান্সের এক সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন আভাস দিয়েছে। জ্বালানির কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে ফ্রান্সে গত ১৭ নভেম্বর থেকে চলছে ‘ইয়েলো ভেস্টস’ আন্দোলন।
ফ্রান্সের ইতিহাসে গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ক্রমাগত এ আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। একইসঙ্গে সহিংস রূপ ধারণ করেছে তা। এরইমধ্যে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে তিনজন। ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীরা হলুদ রঙের পোশাক পরে রাস্তায় নেমেছে। প্রতীকীভাবে হলুদ রঙ বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ ফরাসি আইন অনুযায়ী প্রত্যেক গাড়িতে হলুদ রঙের কাপড় থাকতে হয়। ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন ক্রমাগত জোরালো হয়ে ওঠার একপর্যায়ে সরকারের সঙ্গে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়।
আন্দোলনকারীদের নমনীয় অংশ এতে সায় দিলেও শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি বাতিল করা হয়েছে। ‘ইয়েলো ভেস্ট’ গ্রুপের কয়েকজন সদস্য জানান,সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনায় না যাওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে মৃত্যু হুমকি পেয়েছেন তারা। তাই আর আলোচনা হচ্ছে না। এর মধ্যেই রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ জ¦ালানি কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের ঘোষণা দিতে পারেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত ১২ মাসে ফ্রান্সে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। দেশটির বেশিরভাগ গাড়িতে ডিজেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গত দশকের প্রথম দিককার পর এখনই দেশটিতে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকার সেখানে ‘পরিস্কার গাড়ি ও জ্বালানি’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে তেলের ওপর হাইড্রোকার্বন কর বাড়িয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেলের ওপর ৭.৬ সেন্ট ও প্রতি লিটার পেট্রোলের ওপর ৩.৯ সেন্ট হারে কর আরোপ করা হয়েছে।
এ ছাড়া আগামি জানুয়ারি মাস থেকে আরও ৬.৫ সেন্ট ও ২.৯ সেন্ট হারে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেলের দামের এমন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলনে নেমেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অভিযোগ, তার সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে বিরোধী রাজনীতিবিদরা এ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে। গত সোমবার জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন তিনি। মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভ মোকাবিলায় যেকোনও ধরনের ব্যবস্থার সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সার্বিয়া সফর বাতিল করেছেন ম্যাক্রোঁ। গত সোমবার ফরাসি প্রধানমন্ত্রীও বিরোধী দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।