ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি আরও এক শিশু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিগত কয়েক মাসে অভিবাসনের প্রত্যাশায় গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে ভীড় জমিয়েছে লাখো মানুষ। নিজ দেশে নিপীড়ন, দারিদ্র্য ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। তবে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের গ্রেফতার, বিচার ও বিতাড়নের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবর্তক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি হলো আরও এক গুয়াতেমালান শিশু।
মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের চেষ্টার সময় আটক হওয়া বাবার সঙ্গে শিশুটিও এতোদিন মার্কিন সরকারের হেফাজতে ছিল। বাবার আমেরিকা প্রবেশের স্বপ্নের সঙ্গে গত সোমবার মৃত্যু হয় ফেলিপ আলোনজো গোমেজ নামের আট বছর বয়সী শিশুটিরও। এরআগে ৬ ডিসেম্বর হেফাজতে থাকা অবস্থায় প্রাণ হারায় সাত বছর বয়সী জ্যাকেলিন কাল। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ও টেক্সাসের একজন আইনপ্রণেতাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে।
এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত রক্ষা কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। রেহায় মিলছে না শিশুদেরও। মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত প্রত্যেককে সীমান্তে আটক রাখার ব্যাপারে অনড় ট্রাম্প। আর সেকারণে মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী শহর মেক্সিকালি ও তিজুয়ানায় অস্থায়ী শিবিরে ভীড় জমেছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। আটক হওয়া অভিবাসী শিশুদেরকে মার্কিন সরকারের আটককেন্দ্রে হেফাজতে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ আট বছর বয়সী আলোনজো গোমেজের মৃত্যুর খবর দেয়।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দাবি করে, ২৫ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহরে প্রাণ হারানো ফেলিপোর মধ্যে ‘অসুস্থতার লক্ষণ’ দেখা গিয়েছিল। তাকে ও তার বাবাকে নিউ মেক্সিকোর আলামোগোরডোর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে শিশুটির ঠা-া ও জ¦র শনাক্ত হয়। তাকে অ্যামোক্সিলিন ও ইবুপ্রফেন খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে গত সোমবার দুপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে গত সোমবার সন্ধ্যায় বমি শুরু হলে শিশুটিকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর সে মারা যায়। শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই শিশুর মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মহাপরিদর্শক ও গুয়াতেমালান সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। টেক্সাসের কংগ্রেস সদস্য জোয়াকুইন কাস্ত্রো শিশু ফেলিপের মৃত্যুর কারণ জানতে কংগ্রেসীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অভিবাসী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতি মানবীয় মর্যাদাপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হেফাজতে থাকা যেকোনও মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
এ মাসেই মার্কিন সরকারের হেফাজতে থাকা অবস্থায় জ্যাকেলিন কাল নামে সাত বছর বয়সী আরেক গুয়াতেমালান শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। জ্যাকেলিন তার বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলো। গরীব শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের কাছে টানতে উগ্র ডানপন্থী জনতোষণবাদী অবস্থান নিয়ে ভোট জিতেছিলেন ট্রাম্প।কৃষ্ণাঙ্গ ও অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছিলেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে। মেক্সিকো সীমান্তে বিভেদের দেওয়াল তুলে শ্বেতাঙ্গদের সামনে হাজির করেছিলেন আমেরিকান ড্রিম। সম্প্রতি সেই বিভেদের দেওয়ালকে কেন্দ্র করে সরকারি কার্যক্রমকে অচলাবস্থায় ঠেলে দিতেও পিছপা হননি তিনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মেক্সিকো সীমান্তেও অমানবিক অভিবাসন নীতি বাস্তবায়ন করছেন তিনি। তার ঘৃণ্য নীতি ছাড়ছে না শিশুদেরও।