ত্বকের জন্য গোলাপ

লাইফস্টাইল: তোমার জন্য সকাল, দুপুর তোমার জন্য সন্ধ্যা তোমার জন্য সকল গোলাপ এবং রজনীগন্ধা। কবি হেলাল হাফিজের কবিতায় এভাবেই গোলাপ এসেছে প্রেমে। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতায় শোভনলালের টিনের পেটরার ভেতর ‘গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে আচ্ছন্ন’ অবস্থায় লাবণ্যর যে ছবি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, সেটিই তো নিশ্চুপ প্রেমিক শোভনলালের লাবণ্যপ্রেমের প্রথম প্রমাণ। জোরালো চরিত্র অমিতের কাব্যময় প্রেম নিবেদনের উল্টো পিঠে থাকলেও শোভনলালের ভালোবাসা যেন মিথ্যা হবার নয়!
শুধুই কি প্রেমের কাব্য-উপন্যাসে গোলাপ? গোলাপ আছে রূপচর্চায়ও। হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় গোলাপের ব্যবহার হচ্ছে। গোলাপ কাজ করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে। এটি ত্বকের দাগ দূর করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। আবার গোলাপের সুঘ্রাণ মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।’
এত গুণের গোলাপ ঠিক কী কী ভাবে রূপচর্চায় কাজে লাগানো যায়, জেনে নিন রাহিমা সুলতানার কাছ থেকে:
মুখের ত্বকের জন্য প্যাক
ষ ১ চা-চামচ গোলাপ পেস্ট ও ১ চা-চামচের চার ভাগের এক ভাগ পরিমাণ মধুর সঙ্গে রাজমাগুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন। রাজমা না পেলে ময়দা দিয়েও কাজ চালানো যেতে পারে। তবে রাজমা ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়।
গোলাপ পেস্ট, দুধ, মধু ও জাফরানের মিশ্রণ প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাক ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়। দাগও কমে আসে।
ষ গোলাপ পেস্ট, ওট, দুধ এবং মধু মিশিয়েও প্যাক তৈরি করা যায়। ফেসপ্যাক লাগানোর পর ১৫ মিনিট রাখুন। সপ্তাহে এক দিন ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এর বেশি নয়, অতিরিক্ত ব্যবহারে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রাকৃতিক ক্লিনজার চাই?
রোদে পোড়া ভাব অতিরিক্ত হলে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে গোলাপ পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বকের জন্য গোলাপ পেস্ট এবং দুধের মিশ্রণ তৈরি করুন। ত্বক তৈলাক্ত হলে দুধের পরিবর্তে ইয়োগার্ট ব্যবহার করে মিশ্রণ তৈরি ব্যবহার করুন। আপনার ত্বকের উপযোগী ক্লিনজারের মিশ্রণ তৈরির পর কাচের জারে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন এক সপ্তাহের জন্য। প্রতিদিন এই ক্লিনজার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহার করলে বাড়তি কোনো কৃত্রিম ক্লিনজারের প্রয়োজন নেই। আর এ মিশ্রণ ব্যবহারে ত্বকের টোন দুই থেকে তিন ধাপ (শেড) পর্যন্ত উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে।
ঠোঁটের ঔজ্জ্বল্যে প্রথমে চিনি ও লেবুর রসের মিশ্রণ দিয়ে ঠোঁট হালকাভাবে স্ক্রাব করে নিন। এর ফলে ঠোঁটের মৃত চামড়া উঠে আসে। এরপর গোলাপ পেস্ট ও মধুর মিশ্রণ ঠোঁটে লাগান। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গোলাপি আভার জন্য লাল গোলাপ সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন গোলাপ ও মধুর ব্যবহারে ঠোঁটে কালচে ভাব দূর হয়, গোলাপি আভা ফুটে ওঠে। তবে স্ক্রাবিং করবেন সপ্তাহে একটি দিনই। আর সাত দিনের জন্য গোলাপ পেস্ট ও মধুর মিশ্রণ কাচের জারে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।

কনুইয়ের দাগ?
কনুইয়ে দাগ থাকলে গোলাপ পেস্ট, অলিভ অয়েল, মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ সেই দাগের অংশে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চিনি দিয়ে স্ক্রাব করুন ৫ মিনিট ধরে। মোটমাট ১৫ মিনিট লাগবে। সপ্তাহে দুই দিন এ মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
বডি স্ক্রাব হিসেবে
১ টেবিল চামচ গোলাপ পেস্ট, আধা কাপ টকদই, ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া এবং ১ চা-চামচ মধুর মিশ্রণ বডি স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে এক দিন এ মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
ঘরে বা স্নানঘরে
ঘরে মিষ্টি সুবাস আনতে একগুচ্ছ গোলাপফুল রাখতে পারেন। অ্যারোমা হিসেবে গোলাপের ব্যবহার অতুলনীয়। গোসলের সময় বাথটাবে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিতে পারেন।
কিছু বিষয় জেনে নিন আরও
গোলাপের পেস্ট দিয়ে যেকোনো প্যাক তৈরির পর শুধু পানি দিয়ে তা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সাবান বা ফেসওয়াশজাতীয় কিছু দিয়ে ধোবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হয়।
প্যাক ধুয়ে ফেলার পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন অবশ্যই। যেকোনো রঙের গোলাপ দিয়েই প্যাক তৈরি করা যায়। তবে ঠোঁটে গোলাপি আভা আনতে লাল গোলাপ সবচেয়ে ভালো।
আমদানি করা গোলাপ ফুল সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক পদার্থ দেওয়া থাকে। তাই সরাসরি এসব ফুলের পাপড়ি ব্যবহার না করাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় অর্গানিক গোলাপ ফুল ব্যবহার করলে। তবে তা যদি পাওয়া না যায়, অর্থাৎ যদি রাসায়নিকযুক্ত গোলাপ ফুল ব্যবহার করতে হয়, তাহলে পেস্ট করার আগে পরিষ্কার পানিতে পাপড়িগুলো ভিজিয়ে রাখুন ২০ মিনিটের জন্য। এরপর তুলে নিয়ে সেগুলো দিয়ে পছন্দের প্যাকটি তৈরি করুন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!