দরিদ্র পরিবারের সন্তান মুন্নীর চিকিৎসক হওয়ার দায়িত্ব নিল আ.লীগ নেতা কামরুজ্জামান উজ্জল

পাবনা প্রতিনিধি: মুন্নীকে নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমে খবরটি নজরে এলে তার মেডিকেল কলেজে পড়ার সম্পূণ দায়িত্ব বহনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য সুজানগরের সন্তান কামরুজ্জামান উজ্জল।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩১১০তম হয়ে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মোছা: জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৬৯.৭৫ নম্বর। শিক্ষা জীবন জুড়েই অভাব অনটনে আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল মুন্নীর নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেও সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরে ছিল।

মোছা: জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের বাকী বিল্লাহ ও মোছা: রওশন আরা খাতুনের মেয়ে। ৪ সন্তানের মধ্যে মুন্নী বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মুন্নীর পিতা একজন দরিদ্র ভ্যানচালক। মুন্নীর পিতার নিজ বাড়ির ২ কাঠা জায়গা ছাড়া তেমন কিছুই নেই।
বাড়িতে ছোট টিনের একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। নুন আনতে পান্তা ফুরানো মুন্নীর পিতার পক্ষে মেয়েকে মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানো তার পক্ষে অসম্ভব।

গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারায় সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতেই মুন্নীর শিক্ষাজীবনের সমস্ত ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিলেন ওই সুজানগর এলাকার সন্তান কামরুজ্জামান উজ্জল।
বুধবার বিকেলে তার পক্ষে ও সুজানগর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজ মুন্নির বাড়িতে গিয়ে মিষ্টিসহ ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে পড়াশুনার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে তার পাশে থাকার ঘোষণা দেন। এ সময় আওয়ামীলীগ নেতা কামরুজ্জামান উজ্জল মুঠোফোনে মুন্নি ও তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান উজ্জল বলেন, মেয়েটি আমার জন্মমাটির সন্তান। নিজ সন্তানের মতো বিবেচনা করে তার শিক্ষাজীবন শেষ করা পর্যন্ত পাশে থাকার পোষন করেছি মহান সষ্টিকর্তার ইচ্ছায়।

সুজানগর পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজ বলেন, ইতিমধ্যেই সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। উজ্জল ভাইয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বাকি কাজটুকু খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে মুন্নির পরিবারে সম্মতিতে সম্পন্ন করা হবে বলেও জানান তিনি। তার শিক্ষা জীবন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ স্যারকেও অবহিত করা হয়েছে।

মুন্নীর মা মোছা: রওশন আরা খাতুনের বলেন, স্যার মোবাইল ফোনে আমাদের সাথে কথা বলেছেন। তারা আমার মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।

মেডিক্যাল কলেজের ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুন্নী বলেন, এখন আমি পৃথিবীর সবচে খুশি মানুষের একজন। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় পড়ালেখার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেক অসুবিধার মধ্যে থাকলেও আমি চেয়েছিলাম পড়াশুনায় ভালো রেজাল্ট করে সমাজের অসহায় বঞ্চিতদের পাশে দাড়াতে। একই সাথে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সহায়তার কথাও স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এবারে দরিদ্র পরিবারের অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে মুন্নী সেই সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। সে আমাদের বিদ্যালয়সহ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার এই অসামান্য সাফল্যে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

প্রস্গত, মুন্নী ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!