দলকে শক্তিশালী করে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে: শেখ হাসিনা
ডেস্ক : আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, মানুষ যাতে স্বতস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়ে আমাদেরকে নির্বাচিত করে এবং আমরা যেন দেশসেবা করে যেতে পারি। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারি।
তিনি বলেন, এখানে কাউন্সিলরবৃন্দ আছেন- সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। আর জাতির পিতার যে আদর্শ সেই আদর্শ মেনেই চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে নির্মিত প্যান্ডেলে অনুষ্ঠিত হয় এই অধিবেশন। তিনি বলেন, আমি বলব সকলকে কাজ করতে হবে সেই চিন্তা থেকে, যে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করা, এবং মানুষ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে এবং আমরা যেন দেশ সেবা করে যেতে পারি, যেন জাতির পিতার স্বাপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়তে পারি। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য আওয়ামী লীগ ঠিক করেছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ স্থির করেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। কাজেই আওয়ামী লীগকে সেইভাবেই গড়ে তুলতে হবে। সরকার প্রধান বলেন, বাংলার জনগণকে জাতির পিতার স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনকালে জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে পারেন নাই। সেই স্বপ্ন পূরণই তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর বাবা-মা’য়ের আত্মা যেন শান্তি পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেই রক্ত যেন বৃথা না যায়, সে লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে বিগত ১০ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। লক্ষ্য আরো অনেক দূর যেতে হবে। সেজন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। সাধারণ ক্ষমতায় কেউ ক্ষমতায় আসলে পরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু আমরা সেটা পেরেছি। মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেছি। আওয়ামী লীগ যে একটি আদর্শ নিয়েই এগিয়ে চলছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটা কাউন্সিলরকে এটা মাথায় রাখতে হবে, যে জাতির পিতার সেই আদর্শ নিয়ে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর প্রায় ছয় বছর বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সে কথাও তিনি কাউন্সিলরদের সামনে স্মরণ করেন। ৮১ সালে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বাবা, মা, ভাই, সব স্বজন হারিয়ে এসেছিলাম। এসেছিলাম একটা লক্ষ্য নিয়েই। সব সময় একটা কথাই আমি চিন্তা করি, যে আমার বাবা তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন এদেশের মানুষের জন্য। বার বার কারাবরণ করেছেন, জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। কিন্তু কখনও মাথা নত করেননি। বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করা, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা, বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে একটা মর্যাদা এনে দেওয়া- এটাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বাপ্নটা তিনি পুরণ করে যেতে পারেননি, মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় হাতে পেয়েছিলেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, তার সেই আকাক্সক্ষাটা পূরণ করা। স্বপ্নটা পূরণ করা। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেন অন্তত আমার বাবা-মায়ের আত্মাটা শান্তি পায়। আর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের যে স্বাধীনতা, সেটা যেন বৃথা না যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে ‘হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের’ রাজনীতি শুরু হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২৯টা বছর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের বিরুদ্ধে যত সংগ্রাম-আন্দোলন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার যত সংগ্রাম সেটা আওয়ামী লীগই করেছে। আওয়ামী লীগই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন সবাই মিলে ‘কী পেলাম, কী পেলাম না’ এই চিন্তা না করে.. জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতা বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকের নূন্যতম যে অধিকার, তাদের যে মৌলিক অধিকার, যে অধিকারের কথা আমাদের সংবিধানে দেওয়া আছে- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকার, সেই অধিকার দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা যেন স্থায়ীভাবে গড়ে তুলে যেতে পারি, সেই লক্ষ্য নিয়েই সংগঠনের প্রতিটি তৃণমূলের নেতাকর্মী কাজ করবে। তিনি বলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসারা সবসময় নিজেদের ভাগ্য নিয়ে এবং অসৎ উপায়ে ক্ষমতা দখলকে বৈধ করার কাজেই ব্যস্ত ছিল। তারা জনগণের কথা চিন্তা করে নাই।
সরকার প্রধান বলেন, এদেশে ঋণ খেলাপি কালচার, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদেরকে ব্যবহার করাসহ পুরো সমাজটাকে তারা ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সরকারের কোন নীতি আদর্শ থাকে না, কোন লক্ষ্য থাকে না, সে সরকার চলে কি করে, প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি এ সময় জাতির পিতার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের গোপন প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত ১৪ খন্ড ভলিউমের বইগুলো দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে পড়ার পরামর্শ দেন। কারো বিরুদ্ধে প্রকাশিত গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে অদ্যাবধি কেউ কোন পুস্তক রচনা না করলেও জাতির পিতা কিভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কি কি ষড়যন্ত্র হয়েছিল, কি কি অপপ্রচার হয়েছিল-সেগুলো তুলে ধরার জন্যই ’সিক্রেট ডকুমেন্ট অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক এ-সংক্রান্ত বইগুলো তিনি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে বলেন, বইগুলো থেকে আপনাদের অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে। শৈত্য প্রবাহের কারণে প্রচন্ড শীত অনুভূত হওয়ায় কাউন্সিলের কর্মসূচি সংক্ষেপ করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।