ধোবাখোলা করেনেশন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে অনিয়মের অভিযোগ; নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও রেকর্ড ফাঁস

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার বেড়া উপজেলার নাটিয়াবাড়ি ধোবাখোলা করেনেশন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ৯ জন সদস্য নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মাঝেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল নিয়োগে একজন চাকরী প্রার্থীর সাথে নিয়োগ বাণিজ্যের একটি অডিও কল রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে এসব বিষয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় সদস্যদের ভোটে সভাপতি হিসেবে জাতসাখিনী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মানিককে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। সেখানে পরাজিত ঘোষণা করা হয় পাবনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে।

অথচ সাবেক সাংসদের দাবি, তিনি নিজেই জানেন ই না, তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে জবাব চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া সভাপতি নির্বাচনের আগে পরিচালনা পর্ষদের ৯ জন সদস্য নির্বাচনেও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারী নাটিয়াবাড়ি ধোবাখোলা করেনেশন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সভাপতি নির্ধারণে এক সভা আহবান করা হয়। এ সময় নির্বাচনী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, কলেজ অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিকসহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদে নির্বাচিত ৯ জন সদস্যদের ভোটে সভাপতি নির্ধারণ করা হয়। সেখানে সভাপতি হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় জাতসাখিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মানিক এর নাম। আর পরাজিত প্রার্থী হিসেবে সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজুর নাম ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, সভাপতি নির্বাচনের আগে গত ডিসেম্বর মাসের শুরুতে পরিচালনা পর্ষদের ৯ জন সদস্য নির্বাচন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত প্রচার, প্রচারণা না করে স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষ নিজের পছন্দ মতো লোকদের সদস্য নির্ধারণ করে নিয়েছেন। যেকারণে অনেক অভিভাবকই জানেন না সদস্য নির্বাচন কবে হয়েছে।

বকুল হোসেন নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমার এক ছেলে এবার এইচএসসিতে ভর্তি হলো। আর এক মেয়ে ৮ম শ্রেণীতে। আমি একজন অভিভাবক, অথচ জানতেই পারলাম না, কবে সদস্য নির্বাচন হলো। আমি একজন সদস্য প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম, অভিভাবকদের কাছে ভোটও চাওয়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে গোপনে তারা সদস্য মনোনীত করে নিয়েছেন।

রফিকুল ইসলাম নামের অপর এক অভিভাবক বলেন, আমাদেরও ইচ্ছা থাকে ভোট দিয়ে অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত করবো। ভোট হবে, আনন্দ উচ্ছাস হবে। কিন্তু আমাদের আনন্দের সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী ভোট চাইতে আসলো না, এলাকায় পোস্টারিং হলো না। তারা নিজেরা গোপনে কবে সদস্য নির্বাচন করলো কিছুই টের পেলাম না।

সভাপতি পদ নির্ধারণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না দাবি করে সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন,  ‘আমি জানতে চাই কোন নিয়মে এই নির্বাচনটি করা হলো। যাকে পরাজিত প্রার্থী ঘোষণা করা হলো সেই আমি আরজু কিছুই জানলাম না, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলাম না। আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। আমি কিভাবে প্রার্থী হতে পারি।’

তিনি বলেন, কোন বিধি বিধানের আলোকে নিয়মে আমার অনুপস্থিতিতে ও সম্মতি ব্যাতিরেখে আমাকে প্রার্থী করে নির্বাচন করা হলো। আবার আমাকে পরাজিত হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হলো। এটা রীতিমতো অপমানজনক। আমি এই ঘটনাটিকে একটি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মনে করি। এজন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাচনী কর্মকর্তা বরাবর একটি চিঠি দিয়েছি। আইনসংগত জবাব না পেলে আমি আদালতের আশ্রয় নেবো।

এ বিষয়ে স্কুলের অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরাও জানতাম না যে সাবেক এমপি সাহেব সভাপতি প্রার্থী। নির্বাচনের দিন পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য তার নাম প্রস্তাব করেন। সেখানে একজন শিক্ষক সমর্থনও করেন। পরে দু’জন প্রার্থী হওয়ায় বাধ্য হয়ে ৯ জন সদস্যর গোপন ভোটে সভাপতি নির্ধারণ করা হয়। এখানে আমাদের কোনো ভুল নেই। সদস্য নির্বাচনেও সব ধরনের প্রচার করা হয়েছে। নোটিশ করে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ও ওই স্কুল এন্ড কলেজের নির্বাচনী কর্মকর্তা খবির উদ্দিন বলেন, সভাপতি নির্ধারণে সদস্যদের এক সভা হয় গত ৪ জানুয়ারি। সেখানে শিক্ষক প্রতিনিধি একজন সভাপতি হিসেবে সাবেক সাংসদ মহোদয়ের নাম প্রস্তাব করেছিলেন এবং একজন সমর্থন করেছিলেন। সভাপতি হিসেবে অপর আরেকজনের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা হয়। দু’জনের নাম আসায় তখন সদস্যদের সম্মতিতে গোপন ভোটে সভাপতি নির্ধারণ করা হয়। সাবেক সাংসদ যে চিঠি দিয়েছিলেন তার জবাব প্রমাণসহ তাকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আর গত ডিসেম্বরের শুরুতে সদস্য নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সবাই নির্বাচিত হন। প্রচার প্রচারণার দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। কোনো অভিভাবক জানলো কি না সেটা তারা ভাল বলতে পারবে।

এদিকে, এর মধ্যে নাটিয়াবাড়ি ধোবাখোলা করেনেশন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের জনবল নিয়োগ নিয়ে একটি অডিও কল রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে এক চাকরী প্রার্থীর কাছে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দেবার আশ^াস দিয়েছেন স্কুলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও অধ্যক্ষ।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মানিক। তিনি বলেন, এই অডিওটি তিন বছর আগের। আর অডিওতে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে সেটি তার নয়। অন্য একজনের কন্ঠ এডিট করে আমার বলে চালানো হয়েছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র। তিন বছর আগেও ইউপি নির্বাচনের সময় আমাকে ফাঁসাতে এই একই অডিও রেকর্ড ফাঁস করা হয়েছিল। পরে আর তা ধোপে টেকেনি। এখন আবার সভাপতি নির্বাচনে জয়ী হবার পর আমাকে হেয় করতে একই রেকর্ড বাজানো হচ্ছে।

অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অডিওটি অনেক আগের। যাকে নিয়োগ দেবার কথা অডিওতে এসেছে সে আমাদের প্রতিষ্ঠানেই মাস্টাররোলে চাকরী করতো। তার সাথে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগের আলোচনা হয়েছে। তবে অডিওটিতে তার কন্ঠ নেই বলে দাবি করেন। বিতর্কিত করতে অডিও বানানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!