পাবনার প্রত্যন্ত গ্রামে সর্বাধুনিক ডিজিটাল শিক্ষার মডেল
খাইরুল ইসলাম বাসিদ ও আফ্রিদী মিঠুন ফরিদপুর থেকে ফিরে : আধুনিক ডিজিটাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক, মানবিক, সততা আর স্বনির্ভরতার শিক্ষার অন্যান্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছে পাবনার ফরিদপুর উপজেলা প্রত্যন্ত গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়টি তৈরি করেছে সর্বাধুনিক ডিজিটাল শিক্ষার মডেল।
কার্ড পাঞ্চিং করে ঢুকতে হয় শ্রেণীকক্ষে। স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে এসএমএস যায় ঐ অভিভাবকের কাছে। প্রতিদিন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয় এক ঘন্টা। ইন্টারনেটের সাহায্যে গোটা বিশে^র পরিচয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই চিত্র পাবনার ফরিদপুর উপজেলার খাগড়বাড়িয়া ডিজিটাল শিক্ষার মডেল প্রাথমিকি বিদ্যালয়।
সরেজমিনে বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, গান-ছড়া আর কবিতা ও খেলার ছলে শিশুদের পড়া-লেখা, নের্তৃত্ব আর সেবা কর্মনিষ্ঠার জন্য শিশুদের মধ্য থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ক্ষুদে চিকিৎক ও ফায়ারম্যান হিসেবে। সততা আর নৈতিকতার দিক্ষার জন্য রয়েছে সততা স্টোর। যেখানে নেই কোন সেল্সম্যান। খাতা-কলমসহ, বইপত্র কিনে তালিকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে শিশুরা।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহমুদ আলী বলেন, মালটিমিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নিলে সবকিছু স্তফুত ভাবে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে। আর এর মাধ্যমে ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীরা অতি উৎসাহ উদ্দিপনা পাচ্চে ফলে স্কুলে ঝড়ে পড়ার হার কমছে। আর এর মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে।
সহকারি শিক্ষক রকিবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ভাল শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ভাল মানুষ তৈরি করাই আমাদের মুল লক্ষ্য। আমরা বিশ^াস করি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর রোল ১ করতে পারব না তবে ভাল শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারব। এটাই আমাদের মুল লক্ষ্য। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞান মনষ্ক করে গড়ে তোলা, মাল্টিমিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করে গড়ে তোলা, ইংরেজি ভাষার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে ইংরেজির প্রতি আ্রগ্রহী করে গড়ে তোলা, সর্বপরি প্রাথমিক শিক্ষার মুল লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করাই আমাদের মুল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্ঠির জন্য এই স্কুলে খোলা হয়েছে মহানুভবতার কর্ণার। যেখানে সচ্ছল শিক্ষার্থীরা গরীবদের জন্য রেখে আসে জামা-কাপড় আর টিফিন। স্কুল ছুটির সময় প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে হয় নৈত্রিক শিক্ষার ক্লাস। নানা মনিষি আর বিক্ষ্যাত ব্যক্তিদের জীবনি পড়ার সহজ সমাধান দেয়ালে দেয়ালে সব শোভা পাচ্ছে। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে ২০০৭ সালে। এই স্কুলে কর্মরত গ্রামের কিছু শিক্ষক গতনুগতির শিক্ষার পরিবর্তে নতুন একটি ধারার কিছু স্বপ্ন দেখান গ্রামবাসীকে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে এগিয়ে আসেন গ্রামবাসী আর জনপ্রতিনিধিরা।
খাগড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাসেত বলেন, ২০০৭ সালে দেশের শেষ্ঠ বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শণ করে অনুপ্রানীত হই। এবং আমি চিন্তা করি আমার বিদ্যালয়টিও বাংলাদেশের একটি শেরা বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা যায় কি না। ২০২৭ সালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনা করি সেই পরিকল্পনা মোতাবেক শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল হাজিরা, বিদ্যালয়ের প্রত্যেক কক্ষে সিসি ক্যামেরার আওয়ায় এসে অফিস কক্ষে বসে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। এর পরে আরো অনেক মানবিক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করি। যেমন মহানুভবতার কর্ণার, সততা স্টোর, শ্রেণীকক্ষগুলো বিভিন্ন মনিষিদের নাম করণ করা এবং বিদ্যালয় আঙ্গিনায় বিভিন্ন কবিতা সম্বলিত ব্যানার দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাবে এখান থেকেও তারা শিক্ষা নিতে পারে। এর পর আরো অনেকগুলো কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি যাবে বিদ্যালয়টিন দেশের শেরা বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার মত একটি উদাহরণ সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি এলাকার বৃত্তবান এবং অন্যান্য শিক্ষাঅনুরাগী তাদেরও এগিয়ে আশতে হবে তাহলেই এটি আসলে টেকশই হবে মনে করেন স্থানীয় ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহম্মদ আলী।
তিনি বলেন, বিষয়টি শুধু জেলা পর্যাযে নয় সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার মত একটি উদাহরণ।স্কুলটি উপজেলা পর্যাযে নয়, জেলা পর্যায়ে নয়, এটি কিন্তু বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা প্রতিষ্ঠানের জন্য জেলা প্রশাসক সেরা জেলা প্রশাসকের পদকও পেয়েছেন। অবশ্যই এটি ছড়িয়ে দেওয়া দরকার কিন্তু সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি এলাকার বৃত্তবান এবং অন্যান্য শিক্ষাঅনুরাগী তাদেরও এগিয়ে আশতে হবে তাহলেই এটি আসলে টেকশই হবে।
ডিজিটাল শিক্ষার মডেল এই স্কুল থেকে থেকেই সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে এমনটি প্রত্যাশা সবার।