পাবনায় বড়দিন উদযাপনে ৩০ গ্রামে উৎসবের আমেজ
পাবনা প্রতিনিধি : ২৫ ডিসেম্বর খ্রীস্টান সম্প্রদায়দের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’। আর এই উৎসব উদযাপনে খ্র্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। পাবনায় ২১টি উপাসনালয়ে বড়দিনের প্রার্থণা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আয়োজনের মধ্যে স্বল্প পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খ্রিস্টযোগ, কেক কাটা, নগরকীর্তন, পিঠা পর্ব, প্রীতিভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। উপাসনালয়সহ বাড়ি-বাড়ি আলোকসজ্জা, গোশালা তৈরী, ক্রিস্টমার্স ট্রি সাজানোসহ নানা প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তবে করোনা ভাইরাসের কারনে আনেকটাই সীমিত করা হয়েছে অনুষ্ঠানাদী।
দুই হাজার বছর আগে বেথেলহেমের এক গোশালায় মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন খ্রীস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রীস্ট। সেই থেকে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর সারাবিশ্বের খ্রীস্ট ধর্মে বিশ্বাসীরা মহাসমারোহে পালন করেন যিশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। সেই যিশু খ্রীষ্টের জন্মতিথি ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপনে পাবনার খ্রীস্টান পল্লী ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বাড়িগুলো এখন উৎসবমুখর। পাবনার ৩০টি গ্রামের খ্রিস্টানপল্লীতে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। চলছে আলোকসজ্জা, গীর্জা ও উপাসনালয়গুলো সাজানো। বাসা বাড়িগুলোও উৎসব ঘিরে চলছে নানা প্রস্তুতি। গোশালা তৈরী ও ক্রিসমাস ট্রি সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটছে সবার। তবে করোনার কারণে এবছর সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড়দিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। স্বজনদের সাথে বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইতিমধ্যে গ্রামের বাড়িতে এসেছে আত্বীয় স্বজনেরা। অতিথিদের আপায়নে ব্যস্থ সময় পার করবে তারা।
কলিদ তালুকদার জানান, আমাদের গির্জা সাজানো হচ্ছে ২৫ ডিসেম্বর আমাদের বড়দিনকে ঘিরে। আল্পনা দেওয়া হচ্ছে, বাড়িতে পিঠা বানো হচ্ছে, আতœীয় স্বজনেরা আসবে। বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই সময়গুলো কাটছে।
ঝিনুক রোজারিও জানান, ২৫ ডিসেম্বর আমাদের এখানে বড়দিন অনুষ্ঠিত হবে, সকাল বেলা আমরা যিশু খ্রিস্টের কাছে আসব, যিশু খ্রিস্ট আমাদের সবার অন্তরে আসবে। এজন্য আমরা সবাই আনন্দিত। সেই জন্যই আমরা গির্জাঘর সাজাচ্ছি অনেক আনন্দ করছি প্রখম থেকেই।
চাটমোহরের মি: স্বপন জানান, আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্ট গোসালায়তে জন্মগ্রহন করেছেন সেই জন্যই আমরা তার প্রতিকৃতি হিসেবে আমরা গোসালাঘর সাজাচ্ছি। শুধু গোসালা নয় গির্জাঘর, মিশনের আঙ্গিনা সম্পূন্যই আমরা সাজানোর কাজ করতেছি।
মি: স্পন আরো তিনি বলেন, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে যেটুকু করার সেইটুকই প্রস্ততুতি গ্রহন করছি। ইতোমধ্যে আমাদের গির্জাঘর সাজানো, সামনের যে জায়গা সেগুলো সাজানো চলছে। আমরা আশা করছি অল্পের মধ্যেই আমরা ভালো কিছু করতে পারব।
মথুরাপুর ধর্ম পল্লীর পাল পুরোহিত দিলিপ এস কস্তা বলেন, যিশু খিস্ট আমাদের পাপ থেকে পরিত্যানের জন্য এবং অন্তরের অন্ধকার দুর করে আলোর পথ দেখানোর বাণী নিয়ে পৃথিবীতে এসছিলেন। জগতে শান্তি ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং সবার মাঝে ভাতৃত্ব মিলন বজায় রাখার আহবানে পালিত হবে এবারের বড় দিন।
উথুলি ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ এর পাষ্টর মিঃ পঙ্কজ গোস্বামী জানান, যিশু খ্রিস্ট শান্তির যে বানী নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন সেই বানী সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান তারা। এবছর করোনা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হোক সেই আরতি থাকবে তাদের। তিনি জানান, সমাজে সমাজে, মানুষে মানুষে শান্তি স্থাপনের বারতা নিয়ে এবারের বড়দিন উদযাপন করা হবে বলে জানান উথুলি ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের এই পাষ্টর।
তবে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে বড়দিনকে ঘিরে অনুষ্ঠান সীমিত করা হয়েছে বলেন জানান চার্চ সংশ্লিষ্টরা।
পাবনা পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, খ্রিস্টান ধর্মাম্বলীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বড়দিন পালন করতে পারেন সেই লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সকল চার্চে গির্জায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকি পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। যে কোন ধরনের নাশকতা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সোচ্ছার।
যীশু খ্রীস্টের জন্মতিথি সবার মাঝে হানাহানি আর বৈষম্য দূর করবে এমনটাই প্রত্যাশা খৃস্ট বিশ্বাসীদের।