পাবনা-১ আসনে মুখোমুখি হেভিওয়েট দুই প্রার্থী
খাইরুল ইসলাম বাসিদ সাঁথিয়া-বেড়া থেকে ফিরে : পাবনা-১ সাঁথিয়া-বেড়া (আংশিক) আসনে এবার মুখোমুখি হেভিওয়েট দুই প্রার্থী। বর্তমান সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু অপরজন হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী গণফোরামে সদ্য যোগদান করে ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। আওয়ামী লীগের ভোটার ও নেতাকর্মীরা বলছেন, ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় তার আসল চেহারা উন্মচিত হয়েছে। আর বিএনপির-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বলছেন, গণতন্ত্র রক্ষায় তারা ঐক্যবন্ধ ভাবে ধানের শীর্ষের পক্ষে কাজ করবেন তার।
সাঁথিয়া-বেড়া (আংশিক) এলাকা নিয়ে পাবনা-১ আসন। এই আসনটি বরাবরই ভিআইপি আসন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসন থেকে যিনিই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনিই সরকারের মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন। এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রীত্ব পান অধ্যাপক আবু সাঈয়িদ (তথ্য প্রতিমন্ত্রী), মেজর (অব.) মন্জুর কাদের (পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী), মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (শিল্পমন্ত্রী), এ্যাড. শামসুল হক টুকু (স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী)। এই কারণে বরাবরই পাবনা-১ আসনের দিকে সবার নজর থাকে একটু আলাদা করে এবং গুরুত্বও বহন করে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে আর বিএনপি-জামায়াত চায় হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতের মাও. মতিউর রহমান নিজামী। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নিজামী ও বিএনপির মেজর (অব:) মঞ্জুর কাদেরকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। ২০০১ সালে আবু সাইয়িদকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয় পায় ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী মাও. মতিউর রহমান নিজামী। তিনিই এবার ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন এই আসনে।
তবে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বলছেন, গণতন্ত্র রক্ষায় তারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবেন তারা।
এ ব্যাপারে পাবনা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাও: জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে পাবনা-১ আসনে জামায়াতের দুই জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র তুললেও শেষ পর্যন্ত জামায়াত নেতা ডা. আব্দুল বাসেত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও অপর প্রার্থী মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র নাজিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র তুলতে পারেননি। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, মনোনয়ন তুলতে গিয়ে চার জামায়াত নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন। তবে তাদের দলীয় কোন প্রার্থী নাই। তারা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা সেই হিসেবেই মাঠে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের ধানের শীষের প্রার্থীই বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হবেন।
সাঁথিয়া পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মিরাজুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের সাথে ছিলেন। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে অনেক বই লিখেছেন। আবারও যুদ্ধঅপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধেও সব সময় সোচ্ছার ছিলেন তিনি। আজ বিএনপির-জামায়ায়ের কাছে কোন মুখ নিয়ে ভোট চাইছেন তিনি।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পাবনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি একজিন দলছুট মানুষ। তার জীবনে অনেক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। জনগনের কাছে তার এবার আসল চেহারা উন্মচিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ দিন তিনি জামায়াত-বিএনপির বিপক্ষে থেকে কথা বললেও এবার তিনি হয়ত মতিউর রহমান নিজামীর কবর জিয়ারত করতে যেতে পারেন। এতেই বোঝা যায় তিনি কেমন, কি ছিলেন আর শেষ বয়সে এসে তার আসল চেহারা উন্মচিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক কান্তিকালে কখনো কখনো রাজনীতিবিদদের বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করে কৌশলগত কারণে জোটে যেতে হয়। জোটবদ্ধ হতে হয়।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধার চেতনা মূল্যবোধ যার মধ্য থেকে রাজনৈতিক ভাবে বড় হয়েছি এবং আমার জীবনে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু তার রাষ্ট্র চিন্তা, ভাবনা, দর্শণ ও সম্প্রদায় রাজনীতি, গনতন্ত্র এবং শোষনমুক্ত সমাজের সবগুলোই আমি ধারণ করি, লালন করি এবং সেটিই জনগনের মধ্যে প্রসারিত করে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার সর্বদা চেষ্টা করছি।
এই এলাকার মানুষের অভিভাবক হিসেবে আমাকে প্রয়োজন ছিলো। কারণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এত দীর্ঘদিন কেউ বিচরণ করেনি এই এলাকায়। আমি সব মানুষের সব দলের, প্রতিটি মানুষের দু:খ দুর্দশা ধারণ করে এসেছি। অত্যাচার অনাচার এবং মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, এই এলাকায় আওয়ামী লীগের সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম আমিই। সব দলের সাথে সব সময সূসম্পর্ক থেকেছে। সেই সুসম্পর্ক নিয়েই প্রতিটি মানুষের সম অধিকার এবং গণতন্ত্রের অধিকার অর্জন করা আমার জীবনে শেষ মুহুর্তে এসে এক চালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ আমি গ্রহন করেছি এবং সেই চালেঞ্জে জনগণ বিজয়ী হবে। তিনি বলেন, তিনি নিজেই একটি প্রতীক। এই প্রতীক বাংলাদেশের মুক্তির মিছিলেও রয়েছে।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, একজন রাজনৈতিকবিদের জীবনে সব সময় রাজনৈতীক প্রক্রিয়ার মধ্যে যারা থাকে নির্বাচনীই তার প্রক্রিয়া। সেই হিসেবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যখন দেশ চলছে তখন প্রত্যাশা সব প্রার্থীদেরই থাকে। সেটা মানসিক ভাবে, চিন্তার ক্ষেত্রে, কর্মের ক্ষেত্রে, সংগঠনের ক্ষেত্রে এবং জন মানুষের সার্থ, কেন্দ্রীয় বিষয় যেগুলো রয়েছে সেগুলো দৃর্শমান থাকে ও মুক্ত থাকে। দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এ ধরনের নির্বাচন বহুবার এসেছে মুখোমুখি হয়েছি, বিজয়ী হয়েছে। কোন কোন সময় চক্রান্ত ও ষড়যন্তের কাছে সুক্ষ্য কারচুপির কারণে কখনো কখনো হার মানতে হয়েছে।
উল্লেখ, ২০০৮ সালে সংস্কারপন্থী হিসেবে বহিস্কৃত হোন আবু সাইয়িদ। ফলে নৌকার নতুন মাঝি হয়ে অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু জামায়াতের আমির নিজামীকে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।
২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট। সেবার নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। সাইয়িদের করা নানা অনিয়ম কারচুপির অভিযোগের ওই নির্বাচনে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পায় টুকু।
সাঁথিয়ায় ১টি পৌরসভা ১০টি ইউনিয়ন ও বেড়ার ১টি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়ন মিলে মোট ভোটার রয়েছে, ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ১শ ১৬ জন ভোটার রয়েছেন।