পাবনা-৫ সদরে প্রিন্স’ই আস্থা আ.লীগে : বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়ন দ্বন্দ্ব
মোফাজ্জল হোসেন বাবু : পাবনা-৫ সদর আসনে নৌকার ভোটে লড়তে বর্তমান এমপির বিপরীতে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন অন্ত:ত ৬ জন প্রার্থী। তবে প্রকাশ্য কোন দ্বন্দ্ব নেই তাদের মধ্যে। অন্যদিকে প্রার্থী নিয়ে মতভেদ না থাকায় আসন পূর্নরুদ্ধারে মনোযোগী বিএনপি। খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী কারবান্দী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের প্রার্থীতা প্রায় চুড়ান্ত। তবে জামায়াতের সাথে কৌশলগত সমঝোতায় বদলে যেতে পারে ভোটের হিসাব নিকাশ।
পাবনা সদরের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স টানা দুই বার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তৃনমূল আওয়ামী লীগে তার প্রভাব ব্যাপক। তৃণমূলের সঙ্গে বোঝা সোজার কারণে তার সমন্তরাল কোন শক্তি উখ্যান না হলেও মনোনয়ন চাইছেন আওয়ামী লীগের আরো অন্ত:পক্ষে ৬ জন।
এরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য খ ম হাসান কবির আরিফ, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ইদ্রিস আলী বিশ্বাস, উপ-কমিটি সদস্য মাজহারুল ইসলাম ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রকিব হাসান টিপু।
সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে রয়েছেন তিনি। দল যদি তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে তিনি নির্বাচনে জয়যুক্ত হবেন বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বলেন, দল যাকেই মনোনয়ন দেবেন তার পেক্ষেই ঐক্যবদ্ধ ভাবে তারা নৌকার পক্ষে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তারা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি করে রেখেছেন।
অন্যদিকে প্রতিকুল রাজনৈতিক পরিবেশও তৎপর বিএনপি। নির্বাচনের প্রস্তুতি ও চেয়ারপ্যারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে যুগপথ মাঠে আছে তৃণমূল। প্রার্থী প্রশ্নেও নেই মতভেদ।
এখানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের পক্ষেই একজোট হয়ে মাঠে রয়েছেন তারা। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনে তারা হারানো আসনটি ফিরে পেতে জোটবদ্ধ ভাবে কাজ করবেন।
পাবনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান তোতা বলেন, বিএনপির একজনই তাদের মনোনীত প্রার্থী অন্যকোন প্রার্থী তাদের নাই। অন্যদিকে জামায়াতের কোন প্রার্থী থাকার কোন ভিত্তি নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে জামায়াত নেতাকর্মীদের দাবি, সারাদেশের মধ্যে জামায়াত একটি আসনও পায় সেটিও হবে পাবনা সদর। তাই জোটে থাকাবস্থায় এই আসনে শিমুলের প্রার্থী হতে চাওয়াটা অবাস্তব। জামায়াত নেতা ও পাবনা ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হুসাইনকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে বলে ইতোমধ্যেই প্রচার শুরু হয়েছে।
জেলা জামায়াতও নীতিগতভাবে মাওলানা ইকবাল হুসাইনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত কারাকন্দি জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুস সোবহান এর ছেলে নেসার উদ্দিন নান্নু এর নামও শোনা যাচ্ছে। তবে তা জোরালো নয়।
তবে এ বিষয়ে জামায়াতের কোন নেতা কথা বলতে রাজি হয়নি।
এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক এমপি মকবুল হোসেন সন্টু, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ মন্তাজ উদ্দিন ও জেলা সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের খান কদর দলীয় টিকিট পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। জাতীয় পার্টির তেমন কোনো কর্মকান্ড চোখে পরছে না।
পাবনা-৫ আসন থেকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুস সুবহান আওয়ামীলীগ প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বকুলকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকারকে পরাজিত করে বিএনপি প্রার্থী বকুল নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুস সুবহান আওয়ামীলীগ প্রার্থী ওয়াজি উদ্দিন খানকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেই সময়ে আওয়ামীলীগের উদীয়মান নেতা হিসেবে পরিচিত বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে চার দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহানকে পরাজিত করেন। ২০১৪ সাল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম ফারুক প্রিন্স বিনা প্রতিদ্বদ্বীতায় নির্বাচিত হন।
বর্তমানে পাবনা পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোট রয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৪শ ৫০ এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৫শ ৬০ জন।