পাবিপ্রবি’র প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবীতে ছাত্র ধর্মঘট : শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিত
পাবনা প্রতিনিধি: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্য ব্যর্থ প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবীতে অনির্দিষ্টকালের জন্যে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সাধারন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ৯ টা থেকে তারা এই কর্মসূচী শুরু করেছেন। এদিকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভোট গ্রহনের পূর্ব নির্ধারিত সময় থাকলেও নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহন স্থগিত করেছেন।
পাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন-২০১৯ এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের জন্যে যাবতীয় কার্যক্রম ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহন শুরু করার কথা থাকলেও আমরা সাড়ে ৯টার দিকে ক্যম্পাসে এসে প্রবেশ করতে পারি নাই। কেননা গত এক সাপ্তাহ জুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ম্যাসে ঢুকে এক বখাটে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং প্রক্টরিয়াল বডির অপসারন দাবীতে তারা একটি আল্টিমেটাম দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টিকে আমলে না নেওয়ার কারনে হয়তো শিক্ষার্থীরা আজ থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ক্যম্পাসের প্রশাসনিক ভবনসহ সকল ভবনে তালঅ ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন কমিশন শিক্ষক সমিতির নির্বাচনটি সাময়িক ভাবে স্থগিত করেছি। পরবর্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে নোটিশ করবেন বলেও জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ নীল দলের সভাপতি প্রার্থী ড. হাসিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সমর্থিত প্যানেলের পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পারার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন কিনা আমাদের বোধগম্য নয়। নির্বাচনের শুরু থেকেই নির্বাচনে ভাইস চ্যান্সেলর তার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে বিভিন্ন ভাবে অপতৎপরতা চালাতে থাকেন। ভোটারদের বিভিণœ ভাবে ভয় ভীতিও প্রদর্শন করার অভিযোগ করেন ভিসির বিরুদ্ধে। তবে গত কয়েকদিন ধরে সাধারন শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির অপসারন দাবীতে বিভিন্ন আন্দোলন ও কর্মসূচী পালন করছিল।
নীল দলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক প্রার্থী কামাল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যম্পাসের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে ব্যর্থ, তারা আমাদের সুনিশ্চিত বিজয় দেখে এই কাজটি করেছেন বলে উল্লেখ করে আরো বলেন, দ্রুত শিক্ষক সিমতির নির্বাচনে ভোট গ্রহন শুরু করার কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যারাতে নেশাগ্রস্থ’ অবস্থায় শহরের রাধানগর মহল্লার একটি ছাত্রীনিবাসে ঢুকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এ সময় ওই বখাটে অন্য ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করে। ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত বখাটের চাচার বাড়িতে বসে সমঝোতা করার চেষ্টা করে মিষ্টি খেয়ে চলে আসেন। বিষয়টি সাধারন শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানা জানি হলে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ পুলিশ প্রশাসনকে চাপ দেওয়ার পর ওই ঘটনায় রাধানগর ডিগ্রী বটতলা এলাকার আমিরুল ইসলামের ছেলে অভিযুক্ত আসিফ ইকবাল চিন্ময়কে (২৭) পুলিশ রাতেই গ্রেফতার করেন। এ সমস্ত কারনে সধারন শিক্ষার্থীরা এই প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন করছেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রোস্তম আলী ফরাজী বলেন, নির্বাচনের বিষয়টি আমার জানা নেই, আর এখানে আমার সমর্থিত কোন প্যানেলও নেই। নীল দল মনগড়া আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল বডিকে অযোগ্য আখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবীতে আন্দোলন করছেন। আসলে কাদের ইশারায় কেন তারা এই কাজ করছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।