পুত্রবধূ ও শাশুড়ির সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

ধর্মপাতা: বৈবাহিক সম্পর্ক শুধুমাত্রনিয়ম রক্ষার নয়।বরং দাম্পত্য জীবন হৃদয় ও আত্মার মেলবন্ধন। কেবল আইন পালন ও নিয়ম রক্ষারমাধ্যমে পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যখনরাসুল (সা.) ও তার সাহাবিদের সুন্নতের অনুসরণ করবে, তখন তাদের জীবনে শান্তি-আনন্দ ও সুখের হাওয়া বইবে।
রাসুল (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সমাজে রান্নাবান্নার কাজ নারীরাই আঞ্জাম দিতেন। রাসুল (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রী-কন্যারাও ঘরের কাজ তারা নিজেরাই করতেন।
বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসুল (সা.) রান্নাবান্নার কাজেঘরের মানুষদের সহযোগিতা করতেন। রাসুল (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রী-কন্যারাও ঘরের কাজ তারা নিজেরাই করতেন।

ফাতেমা (রা.) নারীদের আদর্শ
আদরের প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে প্রিয় নবী (সা.) স্বামীগৃহে পাঠানোর পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কাজ ভাগ করে দিয়ে বলেছিলেন, ঘরের ভেতরের কাজ স্ত্রী করবে আর বাইরের কাজ করবে স্বামী। (যাদুল মাআদ : ৫/১৬৯)
হাদিসে আছে, বারবার আটা পিষতে গিয়ে ফাতেমা (রা.)-এর হাতে ফোসকা পড়ে গিয়েছিল। এ কারণে আলী (রা.)-এর বড় দুঃখ হচ্ছিল। তাই তিনি কোনো সেবিকা পাওয়া যায় কি না সে জন্য প্রিয়তমা স্ত্রীকে রাষ্ট্রপ্রধান-পিতা রাসুল (সা.)-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। ফাতিমা (রা.) সে উদ্দেশে পিতার কাছে গেলেও মুখ ফুটে তা ব্যক্ত করতে পারেননি। পরে রাসুল (সা.) জানতে পেরে নিজেই মেয়ে-জামাতার কাছে এসে মহান এক শিক্ষা দিয়ে যান।
রাসুল (সা.) বললেন, ফাতেমা! যতক্ষণ পর্যন্ত মদিনার প্রতিটি মানুষ সেবাদাস না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মুহাম্মদের (সা.) কন্যাকে কোনো সেবিকা দেওয়াটা পছন্দ করি না। তোমাকে কি আমি এর চেয়েও উত্তম কিছু দেব? ফাতেমা (রা.) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাতে যখন তোমরা ঘুমোতে যাবে তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে। তা তোমাদের জন্য সেবিকার চেয়েও উত্তম হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ৩১১৩)

শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা
শ্বশুর-শাশুড়ি ও ঘরের অন্যান্যের সেবা স্ত্রীর অতিরিক্ত একটি কাজ। এটা তার দায়িত্ব নয়। কিন্তু বর্তমান সমাজ বিষয়টাকে অপরিহার্য দায়িত্ব মনে করছেকিংবা এটিই তার প্রধান দায়িত্ব এমন ভাবছে। অনেক জায়গায় ছেলের জন্য বউ আনা হয়-ই শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করার জন্য। এগুলো নায্য ও পরিমিতিবোধের লঙ্ঘন। কারণ মা-বাবার সেবা করা সন্তানের দায়িত্ব, পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩;কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)
তবে অবশ্যই স্মরণে রাখা চাই, যদি স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন হলে স্বামীর কর্তব্য হলো তাদের সেবা-যতœ করা। তবে কোনো স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করেন, এটা তার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে তিনি অনেক সওয়াব পাবেন। তবে এসব করতে আইনত তিনি বাধ্য নন।

শ্বশুর-শাশুড়ি ও পুত্রবধূ পারস্পরিক সম্পর্ক
তবে স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান-মর্যাদা ও সমীহের চোখে দেখা তার কর্তব্য। মনেপ্রাণে তাদের ভালোবাসা এবং তাদের সেবাযতœ করাতার কল্যাণ ও সৌভাগ্যের কারণ হবে। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদরযতœ ও খাতির করা এবং তার সুখ-সুবিধার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা জরুরি।
যৌথ পরিবারগুলোতে পুত্রবধূরা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযতœ করে থাকেন। এটাকে অনেকে পারিবারিক দায়িত্ব হিসেবেও মনে করা হয়ে থাকে। এটা আমাদের সমাজের আবহমান কালের রীতি।
বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, শ্বশুর-শাশুড়ির সংসার থেকে আলাদা হলেও পুত্রবধূ তাদের দেখাশোনা করেন।শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করার এ রীতি সাহাবায়ে কেরামের জীবনেও দেখা যায়। কাবশা বিনতে কাব বিন মালেক (রা.) ছিলেন আবু কাতাদা (রা.)-এর পুত্রবধূ। কাবশা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আবু কাতাদা (রা.) [কাবশা (রা.)-এর শ্বশুর] ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে প্রবেশ করে তিনি অজুর পানি খোঁজ করেন। তখন কাবশা (রা.) শ্বশুরকে নিজ হাতে পানি ঢেলে দেন। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৭৫)
আবার পুত্রবধূর কোনো সন্তান জন্ম নিলে দাদা-দাদি বৃদ্ধ বয়সেও নাতি-নাতনির জন্য অনেক শ্রম ব্যয় করেন। আদর-যতেœ তাদের দেখাশোনা করেন। কিন্তু এটা তাদের আইনত দায়িত্ব নয়। তবুও তারা এ ‘দায়িত্ব’ পালন করে থাকেন। মূলতএ ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও মানবতাবোধের কারণে তারা এমন করেন।
শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের ব্যাপারটা নতুন কোনো বিষয় নয়। মানবসভ্যতার শুরু থেকেই এই সম্পর্ক চলে এসেছে। কোরআন ও সুন্নাহ থেকে আমরা বিভিন্ন মানবিক সম্পর্কের সীমা-পরিসীমা, দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে জ্ঞান পাই। সঠিকভাবে এ সম্পর্ক লালন করা সবার মানবিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!