পুরুষ সমকামীদের নিয়ে বই: চীনা লেখিকার ১০ বছরের কারাদন্ড

আর্ন্তজাতিক: চীনের আদালত পুরুষ সমকামীদের যৌন জীবনের খোলামেলা বর্ণনার ভিত্তিতে লেখা একটি বইয়ের লেখিকাকে অশ্লীলতার দায়ে ১০ বছরে কারাদন্ড দিয়েছে। এই রায়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যেখানে শিশুদের বন্দি করে রাখার মতো অভিযোগে অভিযুক্তের মাত্র দেড় বছরের কারাদ- হয় সেখানে সমকামীদের যৌন জীবনের ওপর বই লেখার দায়ে কীভাবে ১০ বছরের কারাদ- হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
চীনা লেখিকা লিউ বইটি নিজেই প্রকাশ করেছেন। বইটি সাত হাজার কপির বেশি বিক্রি হয়েছে। এতে তার আয় হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ডলার। অশ্লীল লেখা বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। চীনের আনহুই প্রদেশের উহু কাউন্টির একটি আদালত গত ৩১ অক্টোবর লিউকে ১০ বছর কারাদ-ের সাজা দেয়।

কিন্তু চীনা আদালতের এই রায় নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন এবং এমন কড়া শাস্তি দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, এর চেয়ে অনেক বড় অভিযোগে অনেক কম সাজা দেওয়ার নজির রয়েছে।
একজন ব্যবহারকারী ২০১০ সালের একটি প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, শিশুদের বন্দি করে রাখার মতো অমানবিক অপরাধের জন্য অভিযুক্তকে মাত্র ১৮ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘কেন চীনের মতো এত বিশাল বড় দেশ যৌনতা শব্দটিই সহ্য করতে পারে না?’ আরেকজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘এই ঘটনা এবং এ-সংক্রান্ত আইনের উপস্থিতি দেখে আমার মনে হচ্ছে, সমকামিতাকে বৈধ করাতে চীনে হাজার বছর লেগে যাবে।’

চীন পর্নগ্রাফির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বেশ আগে থেকেই। কিন্তু সম্প্রতি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটি। কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফরেন পলিসি মনে করে, চীন আসলে সমকামিতা নিয়ে তেমন কোনও উচ্চবাচ্য করতে চায় না। তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি হচ্ছে, ‘সমকামিতাকে প্রচার না করা, উৎসাহ না দেওয়া বা নিরুৎসাহিতও না করা।’ সরকারি আদেশ-ঘোষণায় সমকামিতার প্রসঙ্গ প্রায় থাকে না বললেই চলে।

চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবো গত ১৩ এপ্রিল প্ল্যাটফরমটিতে ‘আপত্তিকর কন্টেন্ট’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিলেও মাত্র কয়েকদিনের মাথায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায়। কারণ ব্যবহারকারীরা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিল। ফরেন পলিসি মন্তব্য করেছে, উইবো যে এভাবে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পেরেছে তার কারণ সমকামিতার বিষয়ে চীনা সরকারের তেমন কিছু বলার না থাকলেও জনগণের বলার আছে। আর সেই চাপে পড়েই উইবো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।

চীনকে সমকামীদের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। কখনও কখনও অনুষ্ঠানস্থল পরিবর্তনেও বাধ্য করেছে তারা। ফরেন পলিসি মনে করে, চীনের সাংবাদিকদের মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমকামী পুরুষ রয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!