পুলিশ মেমোরিয়াল ডে আমাদের ত্যাগের দৃষ্টান্ত-পাবনার পুলিশ সুপার

পিপ (পাবনা) : আমরা লড়েছি,আমরা মরেছি সেই ১৯৭১ থেকে। আমরা গড়েছিলাম রাজারবাগে প্রথম প্রতিরোধ, হলি আর্টিজানে জঙ্গির গ্রেনেডে জীবন দিয়েছি আমরা, কখন আগুনে ধলসে গেছি আমরা, কখনও বোমায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছি, কখনও ঘাতকের ধারাল চাপাতি নেমে এসেছে আমাদের কাধ বরাবর, অতিমারীতে যখন সবাই হোম কোয়ারেনটাইনে থেকেছে আমরা তখন বরাবরের মতই বাইরে, চেকপোস্ট, হোম কোয়ারেনটাইন, হাসপাতালে রোগী নেয়া, লাশের দাফন করতে গিয়ে আমরা আক্রান্ত হয়েছি হাজার হাজার, মৃত্যুবরন করেছি প্রায় একশত। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোন বছর নেই যে বছর পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনদান করেননি। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সারা বছর যারা কাজ করেন তাদের বড় একটা অংশ হারিয়ে যান অকাল মৃত্যুতে, যার বেশীরভাগই সড়ক দুর্ঘটনা। কর্তব্যরত অবস্থ্য় নিরত পুলিশ সদস্যদের স্মরন করার জন্য এই দেশে কোন নির্দিষ্ট দিন ছিলনা ২০১৭ এর আগে, অথচ সারা বিশ্বেই নিহত পুলিশ সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরন করা হয় প্রতিবছরের নির্দিষ্ট দিনে, প্রায় সকল পুলিশ অফিসেই তাদের স্মরনে তৈরী করা হয় মেমোরিয়াল ওয়াল। ২০১৭ সন থেকে প্রতিবছর ১ লা মার্চ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন হয়ে আসছে; যদিও সঠিক প্রচারের অভাবে দিনটি সম্পর্কে এখনও অনেকেই জানেন না; তবে যাদের মনে রাখার কথা তারা ঠিকই জানেন, যারা হারিয়েছেন তাদের স্বজনদের তাদের কাছে যেমন তেমনি দেশের তিন লক্ষাধিক পুলিশ সদস্যর কাছে আজকের দিনটি শোকের, সহকর্মীদের মনে করার, তাদের স্বীকৃতি দেয়ার। আজ আনুষ্ঠানিক পুস্পস্তবক অর্পন শেষে পাবনা জেলা পুলিশ লাইনের আলোচনা সভায় নিহতের আত্মীয়রা তাদের বক্তব্যর সময় আমাদের মাঝেই খুজেছেন তাদের হারানো স্বজনদের, এক কন্যা গর্ব করে বললেন তার পিতা তাকে সারা জীবন সৎ থাকতে শিখিয়েছেন, ছুটির অভাবে একনাগাড়ে ১৫ দিনের বেশী তাদের পিতা তাদের সাথে থাকতে পারেননি, আজ যারা এসেছিলেন তাদের অধিকাংশই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় ও দিশেহারা; তাদের নানা আকুতি শুনে বুকের গহীন থকে উঠে আসছিল দীর্ঘশ্বাস মান্যবর আইজিপি মহোদয় গত বছরে নিহত পুলিশ সদস্যদের জন্য উপহার ও নগদ টাকা পাঠিয়েছেন, তাঁর এই বদান্যতায় আপ্লুুত পরিবারের সদস্যরা।

আমি নিজে পুলিশে এসেছি পুলিশকে মনেপ্রানে ধারন করেই, তাই সহকর্মীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কুড়িগ্রামের মত পাবনাতেও পুলিশ মেমারিয়াল ওয়াল তৈরী করলাম, অনেকটা তাড়াহুড়া করেই; পুরো দেয়ালটা ভরে গেছে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত ৪৪ জন পুলিশ সদস্যর ছবিতে যারা পাবনা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা; আমি কখনওই চাইনা এই দেয়ালে আর একটা ও ছবি যুক্ত হোক; নিদের পরিবার নিয়ে চাকরী শেষে স্বাভাবিক মৃত্যু হোক সকল পুলিশ সদস্যর, ভাল থাকুক আমাদের স্বজনেরা। ১৯৭১ এ রাজারবাগে যারা থ্রি নট থ্রি থেকে গুলি ছুড়ছিল আমরা তাদের যোগ্য উত্তরসূরী, মৃত্যুর পর কফিনে জাতীয় পতাকা না পেলেও পুলিশ পতাকা প্রাপ্তির সম্মানটুকু হোক সকল পুলিশ সদস্যর জন্য বড় পাওয়া।

কয়েকদিন আগে পুলিশ নিয়ে একটি লেখা পেয়ে কপি করে রেখেছিলাম, লেখাগুলো আমেরিকার প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও সারা বিশ্বের পুলিশ সদস্যদের অনুভুতি ধারন করে লাইনগুলো, আজকের এই দিনে এর চেয়ে ভাল করে পুলিশকে ব্যাখা করতে পারবেনা কেউ। (জেলা পুলিশের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া)

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!