প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে পরিবর্তনের উদ্যোগ

পাবনা রিপোর্ট এক্সক্লুসিভ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। আর ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন এবং মন্ত্রণালয় থেকে ওই ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৬৫ হাজার পদ সৃষ্টি হচ্ছে। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার বিষয়ে কাজ চলছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে প্রধান শিক্ষক আছে। আর সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা প্রশিক্ষণবিহীন অবস্থায় ১২তম গ্রেডে চাকরি শুরু কওে এবং প্রশিক্ষণের পর তারা যান ১১তম গ্রেডে। আর চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে দশম এবং ১৬ বছর পূর্তিতে যান নবম গ্রেডে। তবে সহকারী শিক্ষকরা প্রশিক্ষণবিহীন অবস্থায় ১৫তম গ্রেডে চাকরি শুরু করে। প্রশিক্ষণের পর তারা যান ১৪তম গ্রেডে। ১০ বছর পূর্তিতে যান ১৩তম গ্রেডে এবং ১৬ বছর পূর্তিতে যান ১২তম গ্রেডে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তারা বেতন পান ১১তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সব চাকরিজীবী দশম গ্রেডে বেতন পান। এমনকি ৩৪তম বিসিএস থেকে যখন দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়, তখন সবাই দশম গ্রেড পেলেও শুধু সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পেয়েছেন ১১তম গ্রেড। ফলে প্রধান শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে আন্দোলন করেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান ১৪তম গ্রেডে। ফলে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের বেতনের পার্থক্য তিন ধাপ। সহকারী শিক্ষকরা কোনোভাবেই সেটি মেনে নিতে রাজি নন। তারা প্রধান শিক্ষকের এক ধাপ নিচে বেতন চান। এ নিয়ে একাধিকবার আন্দোলনও করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। তাছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের এখন নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানা সভায় যোগ দিতে হয়। শিক্ষার বাইরে সরকারি নানা কাজেও তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে তারা বিদ্যালয়ে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না। সেজন্যই মূলত সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রয়োজনীতা অনুভব করা হচ্ছে। তাছাড়া ৬৫ হাজার পদ সৃষ্টি হলে সমসংখ্যক শিক্ষকের পদোন্নতিরও সুযোগ তৈরি হবে।
সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেলের পরিবর্তনের কাজে প্রধান শিক্ষকরা খুশি হলেও সহকারী শিক্ষকরা খুশি নন। তারা সহকারী প্রধান শিক্ষকের নতুন পদটি চান না। তারা মনে করছেন, এ পদ সৃষ্টি হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী শিক্ষকদের দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি না থাকলে এক ধাপ পদোন্নতি পেলেই প্রধান শিক্ষক হওয়া যাবে। তারা প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই বেতন চান।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র এস এম ছায়িদ উল্লা জানান, যদি প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড এবং এর একধাপ পর পর অন্য শিক্ষকদের অবস্থান হয়, তাহলে তা হবে খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে এখনো আমাদের প্রশিক্ষণবিহীন ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য আলাদা আলাদা গ্রেড। আমরা চাইব, মাধ্যমিক শিক্ষকদের মতো এক পদে একটাই গ্রেড থাকুক। আর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য একটা সময় বেঁধে দেয়া হোক। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক থেকে ওপরের পদে কোনো পদোন্নতির ব্যবস্থা নেই। এ ব্যবস্থা না থাকলে মেধাবীরা প্রাথমিকের শিক্ষকতায় আসবে না।
অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, আমাদের দাবি প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি হলে আমরা যখন ওই পদে পদোন্নতি পাব, তখন এমনিতেই আমরা ওই পদের স্কেলে বেতন পাব। তাহলে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য থেকেই যাবে। তাই আমরা এ মুহূর্তে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ চাই না। আমরা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে বেতন চাই।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষক যোগদান করছেন তাদের বেশির ভাগই অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করা। অথচ এই শিক্ষকরা যে পদে যোগদান করেন সেই পদে থেকেই অবসরে যান। এতে অনেক সময়ই দেখা যায়, শিক্ষকরা দরদ দিয়ে পড়ান না। তাই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিক সম্মতির পর শিক্ষকদের বেতন স্কেলে পরিবর্তন আনার বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির কাজ চলছে। তাতে সহকারী শিক্ষকরা দ্রুত ওই পদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন। আর প্রধান শিক্ষকরা যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণির, তাই তাদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর একধাপ নিচে থাকবেন সহকারী প্রধান শিক্ষকরা, আর পরের ধাপেই থাকবেন সহকারী শিক্ষকরা। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য নিয়োগ বিধিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।