ফরিদপুরের গৃহবধু হত্যার বিচারের দাবীতে ওসির অপসারণ দাবী করে বিক্ষোভ

পিপ (পাবনা) : পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের গৃহবধু আশা খাতুন হত্যার বিচারের দাবীতে ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী। তারা এই হত্যা মামলা ধামা চাপা দেওয়ার জন্য ওসির অপসারণ দাবী করে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এ ছাড়া বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।

গত তিন তিন মাসেও পাবনার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বাবু তার মেয়ে আশা খাতুন হত্যার বিচার পায়নি। এমনকি থানা মামলা পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাওয়ায় উল্টো জাহিদুল, তার স্ত্রী রেবা খাতুন ও রেহেনা খাতুনকে মিথ্যে মামলার আসামী হয়ে হাজতবাস করতে হয়েছে। এ ছাড়া একের পর এক চলছৈ মিথ্যে মামলা দেওয়ার পালা। বিষয়টি এলাকার মানুষের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই হত্যকান্ডের ঘটনায় ফরিদপুর থানার ওসির ভুমিকা নিয়ে পÿপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন জানা গেছে, পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার গোলকাটা গ্রামের মৃত আজহার আলীর তিন ছেলে যথাক্রমে বাকী মিয়া, হাসিনুর রহমান ওরফে হুজ্জুতুল্লাহ এবং ছফর আলী। তারা তিন ভঅই যথাক্রম মলেয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর প্রবাশে থাকেন। বাকী মিয়ার স্ত্রী জাহানার খাতুন (৩৫), হাসিনুর রহমান ওরফে হুজ্জুতুল্লাহর স্ত্রী আঙ্গুরি খাতুন (৩০) এবং ছফর আলীর স্ত্রী আশা খাতুন (২৫) বাড়ী থাকতেন। ঐ বাড়ীর ননদের জামাই সাইফুল ইসলাম শ্যালকদের স্ত্রীদেরসহ বাড়ীর শশুড় বাড়ীর দেখভাল করে থাকেন।

নিহত আশা খাতুনের বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, এই বাড়ীর জামাই সাইফুলের সঙ্গে জাহানারা খাতুন এবং আঙ্গুরি খাতুনের অবৈধ পরকীয়ার সর্ম্পক ছিল। আগষ্ট মাসের কোন একদিন জাহানারা খাতুনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় শুয়ে থাকার বিষয়টি তার মেয়ে আশা খাতুন দেখে ফেলে। পরবর্তিতে গত ২ সেপ্টেম্বর সাইফুলের সহায়তায় জাহানারা খাতুন এবং আঙ্গুরি খাতুন মুখ চেপে ধরে জোর করে আশা খাতুনকে বিষ পান করায়। আশা খাতুনের তিন বছরের মেয়ে আরিকা বিষয়টি নিজে দেখে।

এ ঘটনার পর আশাকে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর আশা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এর পর আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে নানা তালবাহানা করে। পরে বিষয়টি ওসি আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি মিমাংসার জন্য ফরিদপুর উপেজলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন গোলাপকে দায়িত্ব দেন।

ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন গোলাপ এক সালিশে নিহত আশা খাতুনের মেয়ে আরিকা আফসানা তাহিয়ার নামে ৯ শতাংশ জমি লিখে দেওয়া এবং দুই লুট টাকা জরিমানা প্রদানের রায় দেন। আসামীরা দুই লুট টাকা উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নিহতের বাবার কাছে দেওয়ার জন্য দেন। কিন্তু নিহতের পরিবার আজও ঐ টাকা পাননি।

এদিকে আশা খাতুনের স্বামী বিদেশ থেকে এসে গত ৪ অক্টোবর একই গ্রামের মুন্নী খাতুন নামের এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেন। অভিযোগ রয়েছে মুন্নী খাতুন তার স্বামীকে গত ১৫ আগষ্ট কৌশলে ইদুর মারা ঔষুধ খাইয়ে মেরে ফেলে।

নিহত আশা খাতুনের বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু আরও জানান, এই মুন্নী খাতুনের সঙ্গে তার মেয়ের জামাই ছফর আলীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। যার পরিপেক্ষিতে মুন্নী, আঙ্গুরি, জাহানারা এবং সাইফুল মিলে আশাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে। তা ছাড়া স্ত্রী মৃত্যুর ৩ মাস ১৩ দিন পার হওয়ার আগেই বিয়ে করা শরীয়ত সম্মত নয়।

এদিকে এ ঘটনার বিচার চাওয়ায় গত ১৮ অক্টোবর ছফর আলী বাদী হয়ে তার প্রাক্তন শশুড় জাহিদুল ইসলাম বাবু, তার স্ত্রী রেবা খাতুন ও প্রতিবেশী রেহেনা খাতুনকে আসামী করে ১০ লÿ ৫০ হাজার টাকা লুটপাটের অভিযোগে ফরিদপুর থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশ তাৎক্ষণিক আসামী জাহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করে পাবনা কারাগারে পাঠায়।

নিহত আশা খাতুনের বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না। জরিমানার দুই লÿ টাকাও পেলাম না। উল্টো আমার নামে সাড়ে ১০ লুট টাকা লুটের মামলা হল এবং আমি জেল খাটলাম। এ কেমন বিচার ?। এ ছাড়া একের পর এক মিথ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুর উপেজলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন গোলাপ সালিশের দন্ড হিসেবে তার কাছে দুই লুট টাকা গচ্ছিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আশার বাবা ভাল লোক নয়। লোভি মানুষ। উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ওসি খুব খারাপ লোক। এর আগে আমরা উপজেলার সভায় রেজুলেশন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনর দাবী করেছি।

ফরিদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, এই এলাকায় আশা নামের কেউ হত্যা হয়নি। যে মেয়েটি বিষপানে মারা গেছে তার চরিত্র খারাপ ছিল। পাশের বাড়ীর একজনের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল বিষয়টি সবাই জেনে যাওয়ায় সে আত্নহত্যা করে।

এদিকে গৃহবধু আশা খাতুন হত্যার বিচারের দাবীতে গতকাল রোববার বিকেলে ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের লোকজন বিক্ষোভমিছিল ও সমাবেশ এবং মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। তারা ঘুষ খেয়ে এই মামলা ধামা চাপা দেওয়ার জন্য ওসি আবুল কালাম আজাদের অপসারণ দাবী করে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবীর, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা আজহার আলী সরকার, উপজেলা শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব আলী সরকার, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসবকলীগ সভাপতি শাহাদত হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল আলম খান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!