বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিলেন খাসোগির ছেলেরা

বিদেশ : সৌদির ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগির ছেলেরা বলেছেন, তারা তাদের বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। শুক্রবার এক টুইট বার্তায় খাসোগির ছেলেদের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। খবর এএফপি। ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগির ছেলেদের ওই টুইট বার্তায় বলা হয়, আমরা শহীদ জামাল খাসোগির ছেলেরা ঘোষণা দিচ্ছি যে, যারা আমাদের বাবাকে হত্যা করেছেন আমরা তাদের ক্ষমা করে দিলাম।

মধ্যপ্রাচ্যের কট্টরপন্থি দেশ সৌদির রাজপরিবারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত খাসোগি গত বছরের ২ অক্টোবর দুপুরে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে জানা যায় যে, ওই কনস্যুলেটের ভেতরেই জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। সৌদির একটি কিলিং স্কোয়াড টিম যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ওই হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

কিন্তু প্রথম থেকেই ওই হত্যাকা-ের কথা অস্বীকার করে আসছে সৌদি। যেদিন জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন ভোরেই সৌদি থেকে একটি প্রাইভেট জেট বিমান নামে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে। তুরস্কের টেলিভিশনে প্রচারিত একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিমান থেকে নয়জন ব্যক্তি নেমে আসে। পরে আরেকটি বিমানে করে আরও ছয়জন আসে। তারা ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের কাছে দু’টি হোটেলে ওঠে।

সন্দেহভাজন ওই ১৫ জনকে সৌদি এজেন্ট হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তাদের নাম এবং ছবিও প্রকাশ করা হয়। খাসোগি হত্যায় সন্দেহের তীর তাদের দিকেই ছিল। সাংবাদিক খাশোগি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন তার প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে তালাক সম্পর্কিত কাগজপত্র নিতে। এরপরেই তিনি তার তুর্কি বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তিনি সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের আগমুহূর্তে সেখানে তার বান্ধবীর কাছে দুটি মোবাইল ফোন রেখে গিয়েছিলেন। তার বান্ধবী সৌদি কনস্যুলেটের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।

কিন্তু খাশোগি সৌদি কনস্যুলেট থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। পরবর্তীতে জামাল খাসোগির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত তার মরদেহের কোনো হদিস মেলেনি। এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে খাসোগিকে হত্যার ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৮ জন দোষী সাব্যস্ত হন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দেওয়া হয় এবং এ ছাড়া তিনজনকে ২৪ বছর কারাদ- দেয় দেশটির একটি আদালত।

বাকিরা এই মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে খাসোগির ছেলে সালাহ বলেছিলেন যে, বিচার ব্যবস্থার ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। অপরদিকে গত এপ্রিলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সালাহসহ খাসোগির অন্যান্য সন্তানরা সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সালাহ। খাসোগি হত্যা মামলা নিষ্পত্তিতে সৌদি সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এবং জাতিসংঘের একটি বিশেষ দূতের পক্ষ থেকে খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদির ডি ফ্যাক্টো শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়। তবে সৌদির তরফ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!