বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল পাবনার তিন যুবক
নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : সীমিত জায়গা ও স্বল্প খরচে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন পাবনার তিন যুবক। স্বপ্ন পূরণের পথে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য আর একাগ্রতায় ডিঙিয়েছেন সব বাধা। শখের বশে শুরু করে লাভবান হওয়ায় তিন বন্ধুর এ শখ পরিণত হয় নেশায়। মাত্র এক বছরেই তারা অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। বিজ্ঞানসম্মত সম্পূর্ণ নতুন এই পদ্ধতির এই মাছ চাষ স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে অন্যদেরও।
পাশাপাশি তিনটি ১৩ ফুট প্রস্থ্যের গোলাকার ও সাড়ে তিন ফুট গভীর পানি ভর্তি হাউজে করা হচ্ছে মাছ চাষ। হাউজ গুলোতে প্রায় ১০ হাজার লিটার পানিতে ছাড়া হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতি ও বিভিন্ন সাইজের মাছ। প্রতিটি হাউজে একাধিক পাইপের মাধ্যমে করা হচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহ। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাছ চাষের এই পদ্ধতির নাম বায়োফ্লক।
এ প্রযুক্তিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছের অব্যবহৃত খাদ্য, মল-মূত্র থেকে নিঃসৃত অ্যামোনিয়াকে ব্যবহার করে অণুজীব প্রোটিনে রূপান্তর করে। এর ফলে বাড়তি খাবার খরচ কমে, পাশাপাশি খাদ্য অপচয় রোধ হয়। যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষে ৬০ ভাগ খরচই হয় খাবারের পেছনে। সেখানে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কার্বোহাউড্রেট ও প্রোবায়োটিক সরবরাহই যথেষ্ট।
এক বছর আগে ইউটিউবে বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ দেখে ভারতে গিয়ে এ বিষয়ে ধারণা নিয়ে আসেন পাবনা সদরের কাশিপুর এলাকার মাসুদ রানা। পরে তারা তিন বন্ধু মিলে শুরু করেন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষা। মাত্র তিন থেকে চার মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে মাছ গুলো। ফলে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতি মাছ চাষে সময় লাগে কম, পাশাপাশি খাদ্য কম লাগায় লাভ হয় তুলনামূলক বেশি।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষী মাসুদ রানা বলেন, ইউটিউব দেখে আমি সর্বপ্রথম শুরু করি। যখন আমি এটা শুরু করি তখন বাংলাদেশে এটা আমি পাইনি। তারপর আমি ইনডিয়ান প্রতিবেদন দেখার পরে আমি ইনডিয়াতে যাই। ইনডিয়া থেকে অনেক কিছু জেনে এখানে এসে মাছ চাষ শুরু করি। মাছ চাষের বয়স প্রায় বছর খানেক। এর মধ্যে দুটি চালান হারভেস্ট করেছি মোটামোটি একটা লাভজনক ব্যবসা।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষী মো: কবিরুজ্জামান বলেন, মাছ ছাড়ার চার মাসেই এটা বিক্রি করার উপযোগী হয়ে যায় এবং খুবই কম পয়সায় বেকার যুবক যারা আছে তাদের জন্য আসলেই এটা লাভজনক। তারা পরাশোনার পাশাপাশি এটা করতে পারে
উদ্যোক্তারা জানান, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে ঝুঁকি কম ও অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। শিক্ষিত বেকার যুবক অল্প পুঁজিতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এছাড়া চাকরীর পাশাপাশিও বাড়তি আয় করা সম্ভব।
মাসুদ রানা আরো বলেন, বেকার যুবক যারা লেখাপড়া করে এবং যারা চাকরী করে তারা অনায়াসেই এটা করতে পারে। আমার দেখাদেখি আমার হাত দিয়ে প্রায় অর্ধশত ট্রাঙ্ক সেটাপ করা হয়েছে। মোটামোটা এটা একটা লাভবান ব্যবসা।
এরই মধ্যে তিন বন্ধুর বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সারা ফেলেছে মানুষের মাঝে। মাছ চাষের অভিনব এ পদ্ধতি দেখে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।
স্থানীয়রা বলেন, আমি এদের সফলতা দেখে আমি গত চার মাস আগে একটা ট্রাঙ্ক দিয়ে শুরু করেছি। দুইটা টাঙ্ক থেকে আমি তিন মাস পরে মাছ বিক্রি করেছি। তাতে দেখা গেছে আমার ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ আসছে।
নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষনের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, কেউ যদি মাছ চাষে আগ্রহী হয় তাহলে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ সংগ্রহ করে তাদের সহযোগীতা করব এবং কারিগরী জ্ঞান দিয়ে তাদের আমরা সহযোগীতা করব। ইতোমধ্যে মৎস বিভাগ থেকে এটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং আমরা বলছি যে, তারা প্রশিক্ষণ নিয়েই মাছ চাষ শুরু করবেন।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, উদোক্তা তৈরির জন্য তাদের যত ধরনের সহযোগীতা দরকার। তাদের বলছি ২৪ ঘন্টা আমার দরজা খোলা। তাদের বলছি তোমরা আমার কাছে আস। তবে অনেকেই ক্ষুদ্র প্রযেক্ট শুরু করেছেন। আর এই মাছ চাষটি নতুন। শহরেও কেউ কেউ এটা করে সফল হয়েছে। পাবনায় যারা এই উদ্যোগ গ্রহন করবে জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। আমরা সব রকম সহযোগীতা তাদের করব।
সরকারী সহযোগিতা, সঠিক নীতিমালা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষিত যুবকেরা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আরও আগ্রহী হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।