বিক্ষোভকারীদের ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী’ বললেন ট্রাম্প

বিদেশ : সিয়াটল শহরের একাংশে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি এলাকা নিয়ে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে টানা কয়েকদিনের সংঘর্ষের পর সোমবার সিয়াটলের পুলিশ ওই এলাকা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এরপর থেকে বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটল হিলের ওই অংশে স্বাধীনভাবে বিচরণ করছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসীদের’ দখলে থাকা এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হলে তিনিই ব্যবস্থা নেবেন। তার এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনের গভর্নর ও সিয়াটলের মেয়র তাদের আওতাধীন এলাকায় প্রেসিডেন্টকে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছেন।পুলিশ সরে আসার পর থেকে সিয়াটলের পূর্ব অংশের ওই এলাকায় বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছে বলে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। আন্দোলনকারীরা ক্যাপিটল হিলের এ পুলিশমুক্ত এলাকাকে ‘ক্যাপিটল হিল অটোনোমাস জোন’ বা চ্যাজ নামে ডাকছে।

গত মাসে মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে নিরস্ত্র জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য শহরের মতো সিয়াটলও ফুঁসে উঠে। দুই সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ, সহিংসতার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জে ইনস্লি শহরটিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন; মেয়র জেনি ডারকান দেন কারফিউ। এসময় বিক্ষোভকারীদের পেট্রল বোমা ও প্রজেক্টাইলের পাল্টায় পুলিশও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশের লাঠিপেটা ও ফ্ল্যাশ ব্যাং ব্যবহারের কথাও জানানো হয়েছে। আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের ‘অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ’ নিয়ে শহর কর্তৃপক্ষের বেশকিছু সদস্যের সমালোচনার পর সোমবার সিয়াটলের মেয়র ক্যাপিটল হিলের আশপাশ থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।

পুলিশ সরে যাওয়ার পর থেকে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে; বিক্ষোভকারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে কবিতা, গান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। সিয়াটলের এ বিক্ষোভকারীরা ‘তাদের কোনো নেতা নেই’ বলে দাবি করলেও এলাকাটিতে ঢোকার বিভিন্ন চেকপয়েন্টে কিছু সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক দেখা গেছে; এলাকাটিতে যারা ঢুকতে চাইছেন স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার একের পর এক টুইটে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিয়াটলের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল শহরে ‘নৈরাজ্যবাদীদের তৎপরতা’ রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ওয়াশিংটনের গভর্নর, সিয়াটলের মেয়র ও অন্য কর্মকর্তাদের সমালোচনাও করেছেন তিনি। “নিজেদের শহরের নিয়ন্ত্রণ নিন, এখনি। আপনারা না নিলে, আমি নেবো,” হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। অন্য এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসীরা সিয়াটলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।”

এর পাল্টায় ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে ওয়াশিংটনের গভর্নর ইনস্লি বলেন, “সরকার চালাতে পুরোপুরি অক্ষম কোনো ব্যক্তির ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ব্যাপার থেকে দূরে থাকা উচিত।”

“আমাদের নিরাপদে থাকতে দিন। আপনি (ট্রাম্প) বাঙ্কারে ফিরে যান। সিয়াটলে অভিযান চালানোর হুমকি দেয়া, আমাদের বিভক্ত করা এবং শহরে সহিংসতা উসকে দেয়ার বিষয়গুলো কেবল অনাহূতই নয়, অবৈধ বলে বিবেচিত হবে,” বলেছেন সিয়াটলের মেয়র ডারকান।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!