বিজয়ের মাস শুরু।। এবিএম ফজলুর রহমান।।
ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার স্বাধীকার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাবনা জেলার রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ও আপামর জনতার সাহসি ভুমিকা স্মরণীয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনার সুর্য সন্তানদের কির্তি অম্লান। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রয়েছে পাবনার ছাত্র যুবক ও শ্রমিকদের অনন্য অবদান। তারই সুতিকাগার ছিল পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান। উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে এই টাউন হল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে পাবনা টাউন হল। অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য এই টাউন হল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অশ্বীনী কুমার দত্ত, এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, শেখ হাসিনা প্র্মুখ নেতা ভাষণ দিয়েছেন এই টাউন হলের জনসভায়। ১৯০৮ সালে এই টাউন হল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন, যেখানে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ ছাড়া শিল্পী আব্বাস উদ্দীনসহ বহু শিল্পী এখানে গান গেয়েছেন। পরবর্তিতে পাবনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটিকে বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চ নাম দেন। সময়ের প্রয়োজনে এই টাউন হলকে আরো আধুনিকায়নের দাবী উঠে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনার নতুন প্রজন্ম পাবনা টাউন হলকে আরও আধুনিয়ন করে ‘স্বাধীনতা চত্ত্বর’ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
যার ফলশ্রুতিতে পাবনা পৌরসভার সহায়তায় স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে সবার অংশ গ্রহণে বৃহত্তর পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিবাহিনী এবং মুুিজব বাহিনী প্রধান রফিকুল ইসলাম বকুলের স্মরনে পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হলের মুক্তমঞ্চের নামকরন করেন ‘স্বাধীনতা চত্বর’। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনীর পাবনা অঞ্চলের অন্যতম সদস্য ও স্কয়ার গ্রুপের অন্যতম পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ফলক উন্মোচন এবং এ চত্বরের নির্মান কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্থানীয় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের উদ্যোগে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্বাধীনতা চত্ত্বরের নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, আধুনিয়কান করার পর এটি হবে উত্তরবঙ্গ তথা দেশের মধ্যে অন্যতম স্বাধীনতা চত্ত্বর। যেখানে প্রতিটি ইট পাথরের ডিজাউনে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিদ্যমান। স্বাধীনতা চত্ত্বরের প্রধান মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্ত ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। যার দুই পাশে দু‘টি গ্রীণ রুম এবং টয়লেটসহ ওয়াশরুম রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ও প্রস্ত ২৪ ফুট। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১৮ ফুট ও প্রস্ত ১১৭ ফুট। যার তিন দিকে দুই স্তরের বসার গ্যালারী রয়েছে। মাঠের উত্তরপুর্ব কনার্রে প্রবেশের প্রধান ফটক ও দক্ষিণ ও পুর্ব কণার্রে ছোট একটি গেট রয়েছে। গতকাল শনিবার সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, মাঠের মাটি ড্রেসিং এবং গ্রীণ রুমের ইলেকট্রিক, সেনেটারী, টাইলস, গ্রীল এবং অ্যালুমিনিয়ামের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ ছাড়া মঞ্চ সাটারিং এর কাজ শেষ পর্যায়ে।
উদ্যোক্তারা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুচনা লগ্নেই সারা দেশের মধ্যে পাবনা প্রথম হানাদার মুক্ত হয়। এখানেই এ জেলার প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনা লালন করেনই এ চত্বরে নির্মান শুরু করা হয় একটি অত্যাধুনিক বিশাল মঞ্চ। স্কয়ার গ্রুপের অন্যতম পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর নেতৃত্বে স্থানীয় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের অর্থায়নে এটি নির্মান করা হচ্ছে।
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছঅত্র আবু সাইয়িদ বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, পাবনা টাউন হল আগে ছিল জরাজীর্ন। যারা এটিকে আধুনিকায়ন করছেন তারা মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
পাবনা নাগরিক সমাজের সভাপতি আব্দুল মতীন খান বার্তা সংস্থা পিপ‘কে সময়ের প্রয়োজনে এটি আধুনিকায়ন জরুরী হয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতা চত্ত্বর আরো বড় পরিসরে পাবনার মানুষকে দেশের মধ্যে পরিচিত করবে।
পাবনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি‘র সিনিয়র সহসভাপতি মো. আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনি সমকাল‘কে বলেন, স্বাধীনতা চত্ত্বরের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও জানতে পারবে।
পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার মানুষ সর্বপ্রথম পাকহানাদারকে প্রতিহত করে। তাই স্বাধীনতা চত্বর পাবনাকে নতুন মাত্রায় পৌছে দেবে।
স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, পাবনার মানুষের উদ্যোগে সরকারের সহায়তায় ছাড়াই এত বড় একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন সমাজে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতে করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা জন্ম নেবে। লেখক : এবিএম ফজলুর রহমান, স্টাফ রির্পোটার দৈনিক সমকাল এবং এনটিভি, পাবনা।