বিজয় দিবসে অতিথি না করায় প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈশ্বরদী : ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের চরমিরকামারি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে নিউ এরা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য মুঞ্জুর রহমান বিশ্বাসকে প্রধান অতিথি না করায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সামনেই প্রধান শিক্ষক আবু মোস্তফা কামাল লিটনকে কে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে নিউ এরা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা কর্মচারী ও উপদেষ্টাবৃন্দ। এসময় প্রধান অতিথি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মকলেছুর রহমান মিন্টুকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয় ।
এ ঘটনায় ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেন উভয় পক্ষ। নিউ এরা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মুঞ্জুর রহমান বিশ্বাসের পক্ষে তার ভাতিজা মুক্তিযোদ্ধা মুন্তাজ আলী বিশ্বাস,মনিরুল ইসলাম মনসের খান,ফকরুল ইসলাম ডাবলু বিশ্বাস ও জাকাত আলী প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছেন বলে দাবী করে বলেন,স্কুলে মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অথচ প্রধান শিক্ষক,সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়ে শহরে আওয়ামী লীগের বিজয় র্যালীতে অংশগ্রহণ করতে যান। র্যালী শেষে তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টুসহ শোভাযাত্রা সহকারে স্কুলে আসেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তোলিত জাতীয় পতাকা নামিয়ে আবারো প্রধান অতিথিকে দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করান। এ ঘটনা দেখে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষককে মারধর করেন। তারা আরো বলেন,এলাকাবাসী জাতীয় পতাকা অবমাননা করার দায়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালকে গণপিটুনি দিয়েছে।
এদিকে বিকেলে আহত প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল লিটন,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাহাজ উদ্দিন সরদার,শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সভাপতি আব্দুল করিম ও সদস্য মনোয়ার হোসেনসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও নিউ এরা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুর রহমান বিশ^াসকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি না করায় এবং স্কুলের সামনে পরিত্যক্ত সরকারী ১০ শতক জমি মুঞ্জুর রহমান বিশ্বাসের নামে লিখে না দেওয়ার পুরানো জেরে তারই নির্দেশে তাঁর এনজিওর পেটোয়া বাহিনী এবং আত্মিয়-স্বজন ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দিয়ে রাখেন এবং প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালকে অশালীন ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। এসময় প্রধান অতিথি মকলেছুর রহমান মিন্টুকে বেশ কিছু সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বিদ্যালয়ের এসএমসি ও পিটিএ সভাপতি তাহাজ উদ্দিন তাজ সরদার ও আব্দুল করিম বলেন,জাতীয় কর্মসূচি পালন কালীন সময়ে একজন সরকারী শিক্ষককে পতাকা অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য লোক লেলিয়ে বেদম প্রহার করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দাবী করছি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি সরকার বলেন,আমার শিক্ষকদের উপর নগ্ন হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার পরামর্শ দিচ্ছি।
এদিকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন,আমার শিক্ষক যদি পতাকা অবমাননার মতো কোন ঘটনা ঘটিয়েই থাকেন তবে তারা উপজেলা চেয়ারম্যান,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করতে পারতেন কিন্তু তা না করে নিজেরা তার বিচার করতে পারেন না। কাজেই এ জাতীয় অনাকাঙ্খিত ও ন্যক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করছি। অন্যথায় আমাদের উপজেলার সমস্ত শিক্ষক মিলে ঈশ্বরদীকে অচল করে দেওয়ার আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হব।