বেড়ায় পাউবোর অবহেলায় ৫ হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগ
পিপ (পাবনা) : পাবনার বেড়া উপজেলায় জলকপাটের (স্লুইসগেট) পাল্লা দিয়ে পানি ঢোকায় ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে অন্তত পাঁচ হাজার বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এতে এসব জমিতে আবাদ করা মরিচ, তিল, পাট, বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এসব এলাকার জমিতে আমনের আবাদও হুমকির মুখে রয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, জলকপাটের পাল্লায় ত্রুটি থাকলেও জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ তা সময়মত মেরামত না করায় এবং পাম্পিং মেসিনের মাধ্যমে পানি নিস্কাশন না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পাউবো ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলাসহ পাবনা জেলার বিস্তীর্ণ অংশ ১৯৯০ সালে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এতে ওইসব এলাকা বন্যামুক্ত হওয়ার পাশাপশি সেচ সুবিধার আওতায় চলে আসে। এ জন্য বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদের পাড়ে বৃশালিখায় একটি ও যমুনা নদীর পাড়ে কৈটলায় একটি পাম্পিং স্টেশনের পাশাপশি কৈটলায় একটি জলকপাটও নির্মাণ করা হয়েছে। কৈটলা জলকপাটটি নির্মাণ করা হয়েছে মূলত প্রকল্প এলাকা থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য। এ ছাড়া জলকপাটের পাশেই রয়েছে জরুরি মূহুর্তে পাম্পিং মেসিনের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার পানি নিস্কাশনের আরেকটি পথ।
কৃষকেরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই যমুনা নদীতে ব্যাপক পরিমাণে পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় কৈটলায় স্থাপিত জলকপাটের পাল্লা দিয়ে পানি ঢুকে কাকেশ্বরী নদীর সাথে সংযোগ থাকা জোলা (নালা) দিয়ে কয়েটি বিলে পানি ঢুকতে থাকে। এতে ফসলি জমি ডুবে যেতে থাকলে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষ জলকপাটের পাল্লাগুলো আরও ভালো করে বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়েকটি পাল্লার নিচ দিয়ে পানি চুইয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এর পাশাপাশি আমপানের প্রভাবে ও এর পরেও গত কয়েকদিনে ওই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে উপজেলার কৈটলা, চাকলা ও হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের নিচু এলাকার অন্তত তিন হাজার বিঘা ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। এতে এসব জমিতে বপন ওরোপন করা পাট, তিল, মরিচ ও বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জমিতে পানি আসায় কৃষকেরা আমনের আবাদও করতে পারছেন না এবছর।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৈটলা জলকপাটের মোট ১২টি পাল্লার সবগুলোই বন্ধ থাকলেও সেগুলোর নিচের দিকের অংশ দিয়ে ভেতরে পানি ঢুকছে। পাউবোর কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা পিপ‘কে জানান, জলকপাটে যমুনা নদীর দিকে পানির উচ্চতা (আরএল) ২৮ ফুট এবং ভেতরে সাড়ে ২২ ফুট। অর্থাৎ দুই দিকে পানির স্তরের পার্থক্য প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট। এতে জলকপাটের যমুনা নদীর দিকে পানির চাপ ব্যাপক হওয়াতেই পাল্লার নিচ দিয়ে চুইয়ে পানি ঢুকছে বলে পাউবোর কর্তকর্তারা জানান।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় দুই তিন বছর কৈতলা স্লুইসগেটের জলকপাটের এমন দশা। সরেজমিনে উপজেলার কৈতলার মানিকনগর, জয়নগর, পাঁচুরিয়া, হাটুরিয়া, বরশিলা দলাইবিলসহ কয়েকটি বিল ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামগুলোর পার্শ্ববর্তী বিল ও নিচু এলাকার ফসলের জমি পানিতে ডুবে গেছে। এসব জমিতে তিল, পাট, মরিচ আবাদ করা হয়েছিল। এ ছাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বোরো ধানের খেতে পানি ঢুকে যাওয়ায় কৃষকেরা বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধান কেটে নৌকায় করে উচু স্থানে নিচ্ছেন। দুই এক দিনের মধ্যেই প্রায় ধানই কাটা শেষে হবে কৃষকদের।
কৃষকেরা বার্তা সংস্থা পিপ‘কে জানান, আর আট থেকে ১০দিন জমিতে ধানগুলো থাকলেই সেগুলো পুরোপুরি পেকে যেত ফলন ভালো হত। ধান কোন মতে ঘরে তুললেও বর্ষার আগেই এভাবে পানি বাড়তে থাকলে অন্যান্য ফসলের ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে পাট,তিল ও মরিচসহ অন্যান্য কাচা ফসলের।
মানিকনগর গ্রামের কৃষক হুজ্জুত আলী বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, নলগাড়া বিলে আমার সাড়ে তিন বিঘা জমির পাকা বোরোধান মাত্র দুই দিনে তলায়া যায়। নৌকা নিয়্যা খুব কষ্ট করে সেই ধান কাইট্যা তুলছি। প্রতিবছর বোরো কাটার পর জমিতে আমনের আবাদ করলেও এবার পানির জন্যে তা করব্যার পারতেছি না। আমার জমির মতো এই বিলের কয়েক শ বিঘা জমির একই অবস্থা হইছে। এভাবে পানি আসতে থাকলি পাটের অবস্থা খারাফ হবি।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসকর আলী বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, আমি সরেজমিনে দেখে স্লুইসগেট দিয়ে পানি ঢোকার বিষয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি।
কৈটলা জলকপাটের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পাউবোর পাবনা কার্যালয়ের যান্ত্রিক (মেকানিক্যাল) শাখা। এই শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদউল্লাহ বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, আমাদের স্লুইসগেটে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। আমি সোমবার সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখেছি। তবে পাল্লা বন্ধ করার সময় দুই-একটি পাল্লার নিচে ইট জাতীয় কিছু থাকায় সেখানে দুই-তিন ইঞ্চি হয়তো ফাঁকা হয়ে আছে। আর ওই ফাঁকা জায়গা দিয়েই কিছু পানি ঢুকছে। আমরা বালুর বস্তা ফেলে সেটাও বন্ধ করার চেষ্টা করছি।