বৈশ্বিক ঝুঁকি সূচকে সপ্তম
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে দু-এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশ এক ভয়াবহ বিপর্যয় মোকাবেলা করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
আশার কথা, অতীতে বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হলেও গত এক দশকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জার্মান ওয়াচ ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২০০টি দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ প্রতিবেদনে ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে তৈরি ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ছিল শীর্ষ স্থানে। এরপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছিল ষষ্ঠ স্থানে। ২০১৭ সালে কিছুটা এগিয়ে অবস্থান হয়েছে সপ্তম। আর শুধু ২০১৭ সালের হিসাবে নবম। এই অবস্থানও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে হলে আমাদের আরো দ্রুত উন্নতি করার কোনো বিকল্প নেই।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ ক্রমাগতভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নির্গমন বেড়ে যাওয়া। অতি সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালে এসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এই উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমে বাড়ছে এবং উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলো ক্রমেই ডুবে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলভাগেও ক্রমে তার প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দেড় ফুটেরও বেশি বাড়তে পারে এবং তাতে সুন্দরবনসহ উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এ অবস্থা মোকাবেলায় সরকার যে বদ্বীপ পরিকল্পনা নিয়েছে, তা দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। ১০০ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনায় ২০৩১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য নেওয়া প্রথম ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৫টি প্রকল্প থাকবে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত।
২০৫০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে দ্বিতীয় ধাপ এবং তৃতীয় ধাপ বাস্তবায়িত হবে ২১০০ সালের মধ্যে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর কৌশল এবং সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা।
গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১০ অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে বাংলাদেশে শুধু সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এই সময়ের উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে। এত বড় ক্ষয়ক্ষতি মাথায় নিয়ে দেশ এগোবে কী করে? বদ্বীপ পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা। আমরা আশা করি, সেই লক্ষ্য পূরণে দ্রুত কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া হবে।