বোরকার বিরুদ্ধে সৌদি নারীদের প্রতিবাদ

ডেস্ক: বিশেষ পোশাক আবায়ার (বোরকা) বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ শুরু করেছেন সৌদি আরবের নারীরা। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সৌদি নারীরা বোরকা উল্টো পরে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন। ছবিগুলোতে দেখা যায়, নারীরা বোরকা উল্টো পরে শরীর ঢেকে রেখে প্রতিবাদ করছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এখবর জানিয়েছে। তেল সমৃদ্ধ কট্টর রক্ষণশীল দেশটিতে নারীদের ওপর বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ঘরের বাইরে বেরুতে হলে সৌদি নারীদের আপাদমস্তক ঢাকা কালো বোরকা পরতে হয়।

মার্চ মাসে সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, ইসলামে আপাদমস্তক ঢাকা কালো পোশাক পরা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু তার এই বক্তব্যে নারীদের পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল হয়নি। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও নির্দেশও দেওয়া হয়নি। ‘ইনসাইড-আউট আবায়া’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে বেশ কয়েকজন সৌদি নারী ছবি পোস্ট করেছেন। এটি দেশটির নারীদের পোশাকের ওপর কঠোর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে একটি ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ।

মানবাধিকার কর্মী নোরা আব্দুলকরিম চলতি সপ্তাহে টুইটারে লিখেন, ‘সৌদি আরবের নারীবাদীরা অনেক সৃজনশীল, তাই তারা প্রতিবাদের এই ভাষা বেছে নিয়েছে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘তারা আপাদমস্তক ঢাকা আবায়া উল্টো পরে ছবি পোস্টের মাধ্যমে জোরপূর্বক পোশাকটি ব্যবহারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করছেন।’ অপর এক নারী টুইটারে লেখেন, এই অনলাইন প্রতিবাদ একটি ‘নাগরিক প্রতিবাদ’।

এ বছরের মার্চ মাসে মার্কিন সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘এ সম্পর্কিত শরীয়া আইনটি খুবই পরিষ্কার ও স্পষ্ট। নারীরা পুরুষের মতোই মার্জিত ও সম্মানজনক পোশাক পরবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, নারীদের কালো রঙের আপাদমস্তক ঢাকা আবায়া পরতে হবে। নারীরাই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন ধরনের মার্জিত ও সম্মানজনক পোশাক তারা পরবেন।’ সৌদি আরবের রাজ পরিবার আর ধর্মীয় রীতি ইসলামের সুন্নী মতের অনুসারী। এই মতাদর্শ ওয়াহিবজম নামেও পরিচিত। এতে কঠোর ইসলামি আচরণ ও পোশাক বাধ্যতামুলক।

দেশটির অভিভাবকত্ব রীতি অনুযায়ী নারীদের ঘরের বাইরে বেরোতে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে যেতে হয়। বেশিরভাগ রেস্তোরায় আলাদা দুটি ভাগ থাকে। একটিতে শুধু পুরুষ আরেকটিতে শুধু নারীদের নিয়ে পরিবারের পুরষ সদস্যরা। সৌদি আরবে এখনও এমন অনেক বিষয় আছে যা পরিবাবের অনুমতি ছাড়া করতে পারেন না।

তার মধ্যে রয়েছে, পাসপোর্টের আবেদন, বাইরে ভ্রমণ, বিয়ে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ব্যবসা শুরু, কারাগার ত্যাগ। গত বছর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সামলান। তেলের মজুদ শেষ হয়ে আসায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

ওই শহরে বিশ্বের আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষণশীল ইসলাম থেকে বেরিয়ে মধ্যপন্থি ইসলামের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি। এরপরই নারীদের জন্য থাকা নানা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে থাকে। গত বছর সেপ্টেম্বরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক ডিক্রিতে নারীদের রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন।

তিনি ঘোষণা দেন ২০১৮ সালের ২৪ জুন থেকে নারীরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জুন মাসে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে শুরু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জুনের শেষ সপ্তাহে গাড়ি চালাতে শুরু করে তারা। এ ছাড়া স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখারও অনুমতি পান সৌদি নারীরা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!