ভাঙ্গুড়ায় ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ্যের সঞ্চয় নিয়ে নয় ছয়
পিপ (পাবনা) : পাবানার ভাঙ্গুড়ায় দুস্থ, অসহায় মহিলাদের অর্থাৎ ভিজিডি কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে ফেরত দিতে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৪ফেব্রয়ারি) দিনভর উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান মনির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন অর্ধশত দুস্থ,অসহায় মহিলারা। তাদের দাবী, তাদের কষ্টার্জিত দুই বছরের জমাকৃত টাকা নিয়ে নয়ছন করেছেন মনিরুজ্জামান মনি।
‘অসুস্থ্য বৃদ্ধ স্বামীকে না খেয়ে বাড়িতে সোয়ায়ে রেখে আইছি জমা থোয়া টেকার জন্যি। কিন্তু এখন শুনছি টেকা কম দিবি। আমরা অসহায় ,আমাদের জমার টেকা কম নিবো কেন? আমাদের সঞ্চয়ের বইও মনি নিয়ে নিয়েছে। আমি প্রতি মাসে ৩শ টাকা করে দিছি ২ বছর অথচ বইতে লিখেছে ২শ৭৫ টেকা করে। তা আবার দুই মাস বইতেও তোলো নাই শুনছি। আমার কষ্টের টেকা পুরো টেকাই ফেরৎ চাই। আমি কেন? কম টেকা নিবো।’ এমন করে গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট নিজের অনুভূতি গুলো ব্যক্ত করেছিলেন ষাটোর্ধ ইনছান খাতুন। উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালের ভিজিডি কার্ডের সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ নিতে এসে তিনি অশ্রু সজলে ওই কথা গুলে বলছিলেন।
ইনছানের মতো ইসমতারা, রিনা খাতুন,শামছুন্নাহার, বেবী খাতুন সহ আর প্রায় অর্ধশত দুস্থ, অসহায় মহিলারাও তাদের ডিজিডি কার্ডের বিপরীতে সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না পেয়ে একই ধরণের অভিযোগের কথা বলেন। একসময় তাদের দাবীর কাছে ইউনিয়ন কর্র্তৃপক্ষ কোনো সৎদুত্তোর দিতে পারে নি।
জানা গেছে, ভিজিডি কর্মসূচী সরকারের একটি সর্ববৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর আওতায় দুস্থ, অসহায় ও শারীরিকভাবে সক্ষম মহিলাদের উন্নয়ন স্থায়ীত্ব করার জন্য খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে উন্নয়ন প্যাকেজ সেবার আওতায় নির্বাচিত এনজিও-র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর এই প্রকল্পের আওতায় অষ্টমনিষা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ২০১৯-২০২০ চক্র বছরের ২৪ মাসের জন্য ৩‘শ ৫৫ জন দুস্থ,অসহায় ও সক্ষম মহিলাকে প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি করে চাউল দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত এনজিও মানব কল্যাণ সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রতিমাসে উপকার ভোগীদের চাউল দেওয়ার আগে ৩শত টাকা করে গ্রহণ করেন। কিন্তু এই এনজিও-র ব্যক্তিরা সরাসরি সুফরভোগীদের নিকট থেকে টাকা গ্রহণ না করে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. মরিুজ্জামান মনির মাধ্যমে গ্রহণ করতেন এমন অভিযোগ উপকারভোগীদের। সঞ্চয়ের টাকা গ্রহণের বিষয়টি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মনিরুজ্জামান মনি স্বীকারও করেছেন। কিন্তু উপকার ভোগীর নিকট থেকে প্রতিমাসে ৩০০ টাকা গ্রহণ করলেও সঞ্চয় জমার বহিতে ২৭৫ টাকা তিনি লিখেছেন। সঞ্চয় বইতে ২৫ টাকা কম লেখা হচ্ছে কেন? উপকার ভোগীদের কেউ কেউ তখন জানতে চাইলেও তথ্য সেবা কেন্দ্রের মনিরুজ্জামান মনি বলেন চাউল পরিবহন খরচ বাবদ ওই ২৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এভাবে তিনি এই ইউনিয়নের দুস্থ, অসহায় ৩‘শ ৫৫ জন মহিলাদের নিকট থেকে ২০১৯-২০২০ চক্র বছরে ভিজিডি চাউল পারিবহনের কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা । আবার করোনা কালীন দুই মাস সরকারি চাউল পেলে ও ২৭৫ টাকা করে জমা দিলেও সেই টাকা আর তাদের সঞ্চয়ের বইতে জমা হয় নি বলেও অভিযোগ করেন ওই বিক্ষোভ কারীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ইউনিয়নের ২০১৯-২০২০ চক্র বছর চক্রের ৩‘শ ৫৫ জন দুস্থ অসহায় সক্ষম মহিলাদের জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত বই ইউপি চেয়ারম্যান ,মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনও স্বাক্ষর শেষে যথা সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্য্যালয়ে পৌঁছায়।
সেখানে বছরের শুরু থেকে প্রতিমাসে তারা পুরো দুই বছরই চাউল পেয়েছেন। পাশাপাশি সঞ্চয় উত্তোলন করার নির্বারিত মানব কল্যাণ উন্নয়ন এনজিও কয়েকমাস পর নিয়োগ পান। তাই প্রতি মাসে প্রতি ভিজিডি কার্ডে ধারীদের নিকট থেকে ২০০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও ২৭৫ টাকা করে নেওয়ার সিধান্ত হয়। কারণ অতিরিক্ত ৭৫ টাকা প্রথম দিকে কয়েকমাস সঞ্চয় না নেওয়ারটাকে পুরা দুই বছরের ২০০ টাকা হিসেবে পুরণ হবে। কিন্তু ওই এনজিও প্রতিনিধি মো. ফারুক হোসেন সরাসরি ভিজিডি কার্ডধারীদের নিকট হতে টাকা উত্তোলন না করে এই ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান মনির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছেন। এই সুবাদে মনিরুজ্জামান মনি প্রতিমাসে ভিজিডি কার্ডের চাউল বিতরণের সময় ৩০০ টাকা করে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সঞ্চয় বইতে লিখেছেন ২৭৫ টাকা। তখন ২৫ টাকা কম কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মনিরুজ্জামান মনি বলেন, এই ২৫ টাকা করে চাউল পরিবহন খরচের জন্য লাগবে।
নিয়মানুযায়ী ভিজিডি কার্ডধারীরা সংশ্লিষ্ট চক্র বছর শেষ হলে তাদের সঞ্চয়ের টাকা লাভসহ ফেরত পাবার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রতিমাসে যথানিয়মে সঞ্চয় জমা নিলেও জমাকৃত মূল টাকা ফেরৎ পাচ্ছে না এমন অভিযোগ করেছেন প্রায় অর্ধশত দুস্থ, অসহায় ভিজিডি কার্ডধারী মহিলা।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের হিসাবরক্ষক কাম- কামকম্পিউটার অপারেটর উত্তম কুমার কুন্ডু জানান জানান, ভিজিডি খাদ্য শস্য পরিহনের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রতি মে.টনে দুরত্ব আনুযায়ি পরিহন খরচ বহন করে থাকে।
ভিজিডির চাউল পরিবহন খরচ কার্ড প্রতি প্রত্যেক মাসে ২৫ টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করে ঘটনার বিষয়ে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান মনি বলেন,ভিজিডি কার্ডের বইগুলো তার নিকট জমা আছে।
অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আয়নুল হক বলেন,করোনার কারণে ভিজিডি কার্ডের উপকারভোগীদের নিকট হতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষ পরিবহন খরচের জন্য প্রতিমাসে কার্ড প্রতি ২৫ টাকা করে গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ও সহকারি কমিশনার(ভুমি) মো. কাওছার হাবিব বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।