ভাঙ্গুড়ায় ভূয়া এমবিবিএস ডাক্তার দিয়ে ৮ বছর : অভিযোগ উঠতেই ক্লিনিক থেকে উধাও
খাইরুল ইসলাম বাসিদ ও আফ্রিদি মিঠুন ভাঙ্গুড়া থেকে ফিরে : অন্যের নাম এবং বিএমডিসি’র নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে ডাক্তার সেজে রোগীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে মাসুদ করিম নামে এক কথিত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতরণা করে আসলেও বিষয়টি গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হলে গাঢাকা দেন কথিত ওই চিকিৎসক। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। তিনি ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের শরৎনগর বাজারের হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামে একটি ক্লিনিকের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এদিকে ঢাকার একটি ক্লিনিকে কর্মরত প্রকৃত চিকিৎসক মাসুদ করিম বৃহস্পতিবার পাবনা সিভিল সার্জন ও উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুনের কাছে একটি অভিযোগ দেন।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিম প্রায় ৮ বছর আগে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিক লিমিটেডে আলট্রাসনোলজিষ্ট ও আবাসিক চিকিসক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তার বেতন ধার্য্য হয় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ওই ক্লিনিকে কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিম বিএমডিসি নিবন্ধন নাম্বার ৩৩৩৬০ ব্যবহার করে ক্লিনিকে রোগী দেখার পাশাপাশি আলট্রাসনো করতেন। সম্প্রতি সাঈদ মাহবুব উল কাদির নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে মাসুদ করিমের প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস আপলোড করেন। সেখানে তিনি ভুয়া ও প্রকৃত চিকিৎসকের ছবি দিয়ে উল্লেখ্য করনে, ‘হেলথ কেয়ার লিমিটেড ক্লিনিকে বিএমডিসি নিবন্ধন নাম্বার ৩৩৩৬০ ব্যবহার করে যিনি চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি প্রকৃত ডাক্তার নয়। ঢাকার একটি ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসক প্রকৃত মাসুদ করিমের নাম-পরিচয় ও নিবন্ধন নাম্বার ব্যবহার করে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় চিকিৎসা দিচ্ছেন ভুয়া ডাক্তার মাসুদ করিম।’ এরপর ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকা ত্যাগ করেন কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিম। অপরদিকে উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুন অভিযুক্ত মাসুদ করিমের কাছে তার শিক্ষাজীবন ও বিএমডিসির সকল কাগজপত্র চাইলে ওই দিন রাতেই তিনি ভাঙ্গুড়া ত্যাগ করেন। এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকার খিলগাঁও এলাকার প্রকৃত চিকিৎসক মাসুদ করিম বৃহস্পতিবার সকালে পাবনা সিভিল সার্জন তাহাজ্জেল হোসেনের কাছে অভিযোগ পত্র দেন।
প্রকৃত ডাক্তার মাসুদ করিম বলেন, ‘ঢাকার খিলগাঁওয়ে আমার নিজস্ব চেম্বারে আমি দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস করি। অতি সম্প্রতি জেনেছি আমার নাম-পরিচয় ও বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় একই নামে একজন ভুয়া চিকিৎসক সেজে ক্লিনিকে চাকুরি করছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায় মৌখিক আমি জানিয়েছি এবং পাবনা সিভিল সার্জনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে আমি দু’টি মামলা দায়ের করবো।’ এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিমের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১৯৯২-৯৩ সেশনে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় এসেছি। বিএমডিসিতে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে নুতুন করে কাগজপত্র ঠিক করে নিয়ে আসতে বলেছে। আমি মংমনসিংহ মেডিকেল কলেজে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, আমার পৈত্রিক বাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায়। তবে রংপুরের শালবন এলাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। তার বাবার নাম আবদুস সাকুর।
অভিযুক্ত মাসুদ করিমের বিষয়ে হেলথ কেয়ার লিমিটেড ক্লিনিকের পরিচালক আবদুল জব্বার জানান, ‘মাসুদ করিমকে মাসিক এক লাখ ১৫ হাজার টাকা বেতনে আমাদের ক্লিনিকে চাকুরী করেন। তিনি পাবনা জেলা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য। পাবনার বিভিন্ন ক্লিনিকে দীর্ঘদিন চাকুরী করেছেন। আমাদের কাছে তার সনদের ফটোকপি জমা দিয়েছিলেন। তবে এখন শুনছি তিনি ভুয়া চিকিৎসক।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুন জানান, ‘ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের চিকিৎসক দাবিদার মাসুদ করিম মুল কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। প্রকৃত মাসুদ করিম স্বশরীরে আমার কাছে এসে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি সিভিল সার্জন স্যার, ইউএনও ও বিএমডিসি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে পাবনা সিভিল সার্জন ডাক্তার তাহাজ্জেল হোসেনের মুঠোফোনে জানতে চেয়ে কল দিলে তিনি রাগান্বিত স্বরে এই প্রতিবেদককে বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকজনকে বলেছি। আমি আবারও বলছি, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুনকে বলেছি।’ আপনাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অন্যের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে একজন ব্যক্তি কিভাবে চিকিৎসা দিয়ে গেল এই প্রশ্ন জিজ্ঞিস করতেই তিনি বলেন, ‘আমাদের তো আর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা সম্ভব না কে কি করছে। আমরা তোর আর পুলিশ না।’