ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতে দালালদের ১০ হাজার রুপি 

ডেস্ক: ভারতের বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের দাবিতে কয়েকটি সংগঠনের আন্দোলনের পর এসব শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। এই তথ্য সংগ্রহের সময় গুজব ছড়ায়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতেই বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মিয়ানমার ফেরত যাওয়া এড়াতে এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে পালানোর উপায় খুঁজতে শুরু করে। নিরাপদে বাংলাদেশে পালাতে দালালের শরণাপন্ন হয় বহু রোহিঙ্গা। গত সপ্তাহে ত্রিপুরা সীমান্তে আটকা পড়া ৩১ রোহিঙ্গার ঘটনা অনুসন্ধান করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে নিরাপদে বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে দালালদের জনপ্রতি ১০ হাজার রুপি করে দিয়েছে তারা। সম্প্রতি ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিজিবি’র বাধায় নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আটকা পড়ে ৩১ রোহিঙ্গা। চার দিন সেখানে অবস্থানের পর গত ২২ জানুয়ারি তাদের গ্রেফতার করে ত্রিপুরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ভারতের সীমান্তরক্ষিবাহিনী বিএসএফ। শুধু এই ৩১ জন নয়, গত কয়েক দিনে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক রোহিঙ্গা সেখান থেকে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। গত ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, বিগত ১০ দিনে ১১১টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৬৮ জন সদস্য কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের কাছের স্থাপিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এরা সবাই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। নতুন আসা এসব সদস্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ত্রিপুরা সীমান্তে আটকে পড়া ৩১ রোহিঙ্গা ২০১৪ সাল থেকে জামাত আলি নামের ব্যক্তির জমিতে ঝুপড়ি বানিয়ে বাস করছিলেন। তাদের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, অন্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারলেও এই ৩১ জন পারেননি। জামাত আলির ছেলে ইশফাক বলেন, বাংলাদেশে নিরাপদে প্রবেশের জন্য তারা প্রত্যেকে দালালদের ১০ হাজার রুপি করে দিয়েছেন। টাকা সংগ্রহের জন্য রোহিঙ্গারা নিজেদের আসবাবপত্র পানির দামে বিক্রি করেছে। সীমান্তে আটকের ৩১ রোহিঙ্গার কয়েকজনের আত্মীয় নাজিম উল হক জানান, ভারতীয় কর্মকর্তারা বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করার আগ পর্যন্ত তারা শান্তিতেই বাস করছিলেন। তথ্য সংগ্রহের সময় শোনা যায় আমাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর জন্য এটা করা হচ্ছে।
নাজিম উল হক আরও জানান, গত তিন থেকে চার মাস ধরে বিভিন্ন রোহিঙ্গা গোষ্ঠী করণীয় নিয়ে আলোচনা করছিল। এই বছরের শুরুতে মনিপুর দিয়ে পাঁচ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর পর বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘আমি নিজেও পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। সব আত্মীয় চলে যাচ্ছিল। ফলে আমাকে সেখানে একা থাকতে হতো। কিন্তু সময়মতো আমি দালালকে টাকা দিতে পারিনি। সেকারণে পরে আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নেই। এর মধ্যেই জানতে পারলাম সীমান্তে তারা আটকা পড়েছে।
ইশফাক বলেন, রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর বাংলাদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা জানতে পেরে আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম না যেতে। কিন্তু এক বা দুই জন ছাড়া বাকি সবাই আমাদের না জানিয়ে পালিয়ে যায়। আবু আহমেদ নামের এক শরণার্থীর স্ত্রী জাহানু গত সপ্তাহে গুয়াহাটি থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাংলাদেশে তার ৭৮ বছরের মা বাস করেন। আহমেদ জানান, জাহানু বাংলাদেশ পৌঁছাতে পারলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। দুই দিন থানায় রাখার পর পুলিশ তাদের রোহিঙ্গা শিবিরে নিয়ে গেছে। সে গেছিলো আমার ভাইয়ের মেয়ে মুজতবা ও তার স্বামী কামালের সঙ্গে। মুজতবা ও কামাল ভাগ্যবান ছিল। গ্রেফতার না হয়েই তারা রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছে গেছে। নারওয়াল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এস. আই বিকাশ হান্স জানান, কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ঝুপড়ি ছেড়ে গেছে বলে শুনেছি। এদের কয়েকজন সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আটকা পড়ার কথাও শুনেছেন। কিন্তু তাদেরকে কেউ এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!