মন্দির-মসজিদ নয়, বিতর্কিত জমিতে শিশুদের জন্য মাঠ চাইছে অযোধ্যা
আর্ন্তজাতিক: মন্দির কিংবা মসজিদ নয় অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে শিশুদের খেলার মাঠ চাইছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের বক্তব্য অযোধ্যাকে আর রাজনীতির খেলা হিসেবে দেখতে চান না।
ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনীতির অঙ্গন বেশ উত্তেজনার শুরু হয়েছে। দেশটির উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যায় গিয়ে ঝাঁঝালো বক্তব্য দিয়ে এসেছেন।
কিন্তু সরযূ নদীর তীরে এই পুরনো শহরের মানুষ রাজনীতির কাল ছোবলে আর পড়তে চান না।তাদের সবার কথায় ভিন্ন সুর।রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কিত এলাকার কিছুটা দূরেই থাকেন বিজয় সিংহ। পেশায় তিনি চিকিতসক। ৪৮ বছর বয়সি এই চিকিৎসক ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে সেখানে হাজির ছিলেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এখন বলছেন, অযোধ্যার মানুষ বহু যুগ ধরে শান্তিতে বসবাস করে এসেছেন। কিন্তু সে দিন বাইরের অনেকে এসে মসজিদ ভেঙে দিল। দুর্ভাগ্যজনক সেই ঘটনা আজও অযোধ্যার মানুষের উপর ছাপ রেখে দিয়েছে।
অযোধ্যার অন্য অনেকের মতোই সিংহ নিজে একজন রামভক্ত। বিতর্কিত জমির পাশে গাছের তলায় টেবিল পেতে ভক্তদের চিকিৎসাও করেন তিনি। তিনি বলেন, ওখানে রামমন্দির হলে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোনও আপত্তি নেই।তবে সেই ঘটনা যদি সংঘাতের সৃষ্টি করে, তা হলে আমি রামমন্দির গড়ার পক্ষপাতী নই।বরং ওখানে খেলার মাঠ হোক, যেখানে সব ধর্মের শিশুরাই খেলতে পারবে।
অযোধ্যার আরেক বাসিন্দা বিবেক ত্রিপাঠীর গলাতেও একই সুর। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়ে থাকতেন ভোপালে। ৬ ডিসেম্বরের ঘটনায় হানাহানি ছড়িয়ে পড়েছিল সেই শহরেও। তিনি তখন স্কুলে।
আচমকাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্লাস। কোনক্রমে অলিগলি পেরিয়ে সে বাড়ি ফিরেছিল।এখন তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ত্রিপাঠীর মন্তব্য, মন্দির-মসজিদ নিয়ে লড়াইয়ের অর্থ বুঝি না। যে বিষয় সংঘাতের জন্ম দেয়, তাকে খুঁচিয়ে তুলব কেন? তাই ওই জমিতে খেলার মাঠ হোক। শিশুদের খেলার জন্য, রাজনীতিকদের জন্য নয়।
শহরের আর এক বাসিন্দা মহম্মদ আজিম বলেন, এখানে হিন্দু আর মুসলিমরা সব সময়েই শান্তিতে বাস করেছে। তারা এখনও শান্তি রাখতে পারবে।আজিমের ক্ষোভ, রাজনীতিক আর বাইরের লোকেরাই নিজেদের কর্মসূচি অনুযায়ী দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাধানোর চেষ্টা করছে রাজনীতিতে লাভের অঙ্ক কষতে।
৪৫ বছর বয়সি রাম লোচন একজন জ্যোতিষী বিতর্কিত জমির পাশেই ভাগ্যগণনা করেন।তিনি বলেন, মন্দির হলে হোক। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠ হলে তো ভালই। রামলালা তো রামেরই শৈশবের রুপ। সূত্র: আনন্দবাজার।