মিনিয়াপোলিসের পুলিশ বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
বিদেশ : যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর মিনিয়াপোলিসের পুলিশ বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এ প্রতিশ্রুতিকে ঐতিহাসিক এবং দেশটিতে পুলিশি নিপীড়ন ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মিনিয়াপোলিস শহর কাউন্সিলের ১৩ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই স্থানীয় পুলিশ বিভাগ বিলুপ্তির পক্ষে রায় দিয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার তারা শহরে ‘জননিরাপত্তার একটি নতুন মডেল’ তৈরির কথা বলেছেন।
এর আগে পুলিশ বিভাগ বিলুপ্তির বিরোধিতা করে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন মিনিয়াপোলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে। এই মিনিয়াপোলিস শহরে গত ২৫ মে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। নিরস্ত্র ফ্লয়েডকে হাতকড়া পড়িয়ে রাস্তায় উপুড় করে শুইয়ে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা তার ঘাড়ে প্রায় ৯ মিনিট হাঁটু চেপে ধরে ছিলেন। একপর্যায়ে দম বন্ধ মারা যান ফ্লয়েড। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বর্ণবাদবিরোধী বিরোধী বিক্ষোভকারীরা পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে শুরু করেন। পুলিশের বরাদ্দ বাতিল এবং খোদ পুলিশ বিভাগ বিলুপ্তির দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (কালোদের জীবনও মূলব্যান) আন্দোলন রোববার ১৩তম দিনে গড়িয়েছে। এদিনও বেশিরভাগ শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্ক, শিকাগোর মতো শহর থেকে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিয়াটলে পুলিশ বিভাগের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভকারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে এক ব্যক্তি। পরে তাকে নিবৃত্ত করতে গেলে তিনি গুলি ছোঁড়েন। এতে একজন আহত হয়েছেন। ওই গাড়ি চালককে পুলিশ আটক করেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার টেক্সাসের হিউস্টন ফ্লয়েডকে স্মরণ করবে। এটি তার নিজের শহর। এই অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরদিন মঙ্গলবার ফ্লয়েডের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রোববার মিনিয়াপোলিস শহরের ৯ কাউন্সিলর একটি বিবৃতি দেন। শহর কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট লিসা বেনডের বলেন, ‘মিনিয়াপোলিসসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই বর্তমান ধারার পুলিশি ব্যবস্থা ও জননিরাপত্তার ধারণা সম্প্রদায়গুলোকে আর নিরাপত্তা দিতে পারছে না।’ নতুন ধরনের জননিরাপ্তার ধারণা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান বেনডের। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, এতদিন শহর কর্তৃপক্ষ পুলিশ বিভাগে যে অর্থ বরাদ্দ দিত তার পুরোটাই সামাজিক খাতে ব্যয় করা হবে।
শহরটির কাউন্সিলর অ্যালোন্দ্রা কানো বলেন, বর্তমান পুলিশি ব্যবস্থা আর সংস্কারের যোগ্য নয়। সুতরাং আমরা এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে চলেছি। গত সপ্তাহে মিনেসোটা রাজ্য কর্তৃপক্ষ মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তদন্ত শুরু করে। রাজ্য গভর্নর টিম ওয়ালজ বলেছিলেন, ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিকড় গেড়ে থাকা পদ্ধতিগত বর্ণবাদের স্বরূপ আমরা উন্মোচন করতে চাই।’ মিনিয়াপোলিস শহর কাউন্সিলের সদস্যরা পুলিশের শক্তি প্রয়োগে বিধিনিষেধের পক্ষে ভোট দিয়ে বলেছেন, পুলিশ এখন থেকে কারও গলা বা ঘাড় চেপে ধরতে পারবে না।
পুলিশ বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়ার ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এখন আলোচনার অন্যতম বিষয়। তবে চলমান ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন জননিরাপত্তার ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে। আবার মিনিয়াপোলিসের মেয়র সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলদের সঙ্গে একমত নন। ফলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা জানতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে।
মিনেসোটাভিত্তিক সংগঠন ব্ল্যাক ভিশনের পরিচালক কান্দেস মন্টগোমেরি বলেন, ‘সশস্ত্র ও জবাবদিহিতাহীন পুলিশ বিভাগ ছাড়াও আমরা নিরাপদে থাকতে পারব। এ পুলিশ বিভাগের প্রধান উদ্দেশ্যেই হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গদের নিপীড়ন করা। স্থানীয় সময় সোমবার ডেমোক্র্যাটরা পুলিশ সংস্কার সম্পর্কিত একটি আইন কংগ্রেসে তুলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক শহরের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও পুলিশের বরাদ্দ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ অর্থ সামাজিক খাতে ব্যয় করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।