মিনেসোটায় টেনে নামানো হল কলম্বাসের ভাস্কর্য

বিদেশ : যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যের রাজধানী সেইন্ট পলে ইতালীয় অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের একটি ভাস্কর্যের মূলোৎপাটন করলেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মিনেসোটা রাজ্য কংগ্রেস ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এক দল আন্দোলনকারী ১০ ফুট উচ্চতার ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যটি দড়ি দিয়ে টেনে এর গ্রানাইটের ভিত্তি থেকে ফেলে দেন। মিনেসোটাভিত্তিক স্থানীয় আদিবাসী আন্দোলনকারীরা এ কাজে নেতৃত্ব দেন। আলোকচিত্র সাংবাদিক ও টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসনরা এ ঘটনার ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন।

এরপর ভিতের কাছে ভেঙে যাওয়া ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। পুলিশের নিপীড়ন ও জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া আন্দোলনে ইতালীয় নাবিক কলম্বাসের ওই ভাস্কর্যের পতন হল, ১৪৯২ সালে শুরু করা যার অভিযানের পথ ধরে আদি আমেরিকানদের সঙ্গে ইউরোপীয়দের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল।

এর পরের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে আটলান্টিকের দাস ব্যবসা আর গণহত্যা-নির্যাতনে আমেরিকা মহাদেশের আদি বাসিন্দাদের হঠিয়ে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ঘটনাপ্রবাহ। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে কলম্বাসের একটি স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর করে পাশের হ্রদে ফেলে দেওয়া হয়। বুধবার ভোররাতে বস্টনে কলম্বাসের আরেকটি ভাস্কর্যের মাথা খুলে ভেঙে ফেলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্ল্যাক লাইভস মেটার’ আন্দোলনের পথ ধরে ঔপনিবেশিক আমলের নিপীড়কদের প্রত্যাখ্যান করার এই ঢেউ লেগেছে ইউরোপেও।

রোববার ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরে সপ্তদশ শতকের দাস ব্যবসায়ীর এডওয়ার্ড কোলস্টোনের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে সাগরে ফেলে দেয় বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। এরপর মঙ্গলবার লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারা থেকে ব্রিটিশ দাস ব্যবসায়ী রবার্ট মিলিগানের ভাস্কর্য সরানো হয়। সেইন্ট পলে কলম্বাসের ভাস্কর্য সরানোর সঙ্গে যুক্ত মাইক ফোর্সিয়া রয়টার্সকে বলেন, “এটা করার এখনই সময়।”

তিনি জানান, তাকে গ্রেপ্তার করে অপরাধমূলক ধ্বংসকার্যের অভিযোগ আনা হতে পারে বলে মিনেসোট রাজ্য পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে সতর্ক করেছেন। ২৫ মে মিনেসোটার মিনিয়াপোলিস শহরে প্রকাশ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার নির্যাতনে ৪৬ বছর বয়সী কৃষাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উত্তাল বিক্ষোভ চলছে।

পুলিশি নির্যাতন, বর্ণবাদ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যে মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়েছে, তার পাশের শহর সেইন্ট পলের বাসিন্দারাই বুধবার কলম্বাসের ভাস্কর্যের মূলোৎপাটন করেন। পাশাপাশি এই দুই শহরকে বলা হয় ‘টুইন সিটিজ’। মিনেসোট রাজ্য কংগ্রেসের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, মিনেসোটার ইতালীয়-আমেরিকানরা ভাস্কর কার্লো বিয়স্কির তৈরি করা কলম্বাসের ওই ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যটি ১৯৩১ সালে নগর কর্তৃপক্ষকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় আদিবাসী আন্দোলনকারীরা কলম্বাসকে সম্মান জানানোর বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।

বুধবার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন কংগ্রেস ভবন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধকালীন কনফেডারেট নেতা ও সৈন্যদের ১১টি ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!