মুহাম্মদ আলীর সেই বাড়িতে ইসলামিক স্কুল

ধর্মপাতা: বিশ্ববিখ্যাত বক্সিং কিংবদন্তী মুহাম্মদ আলী ক্লের খামারবাড়িটি মুসলিম যুবকদের জন্য গ্রীষ্মকালীন ইসলামিক স্কুল হতে যাচ্ছে। বাড়িটির বর্তমান মালিক ও তুর্কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তুকিন ফাউন্ডেশন ইসলামিক স্কুল হিসেবে বাড়িটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। খবর আল-খালিজ অনলাইন ও তুর্কি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ’র।
এ প্রসঙ্গে তুকিন ফাউন্ডেশনের সভাপতি বির্ম তুরান বলেন, বাড়িটি বিক্রি হওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেখেই অবিলম্বে আমরা তা কিনে নিয়েছিলাম। মুহাম্মদ আলী ক্লের জীবনের শেষ দুই দশক আমি তার সঙ্গে এখানে অতিবাহিত করেছি। বাড়িটি শিকাগোর কাছাকাছি হওয়ায় একটি বড় সুবিধা হয়েছে যে, সেখানে একটি বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। আমরা এই অনিন্দ্য সুন্দর ও মনোরম জায়গাটি আলীর স্মৃতির স্মারক করে রাখতে চাই।
এছাড়াও এটি আশপাশের এলাকার মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রীষ্মকালীন স্কুলে পরিবর্তন করা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা আলীর জীবনাদর্শে অনুপ্রাণিত হবে এবং সফলতার রূপরেখা নির্ণয় করতে পারবে। সর্বোপরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
খামারবাড়িটি আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের জোসেফ নদীর তীরে অবস্থিত। বক্সার মুহাম্মদ আলী সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে চার লাখ ডলারের বিনিময়ে এটি কিনেছিলেন। লস এঞ্জেলেস ও ভার্জিনিয়ায় চলে যাওয়ার আগে বিভিন্ন সময়ে তিনি এটি অবকাশ যাপনের জন্য ব্যবহার করতেন। বাড়িটিতে ৪টি বেডরুমের একটি দালান রয়েছে। এছাড়াও সাতটি অতিরিক্ত ভবন রয়েছে, যাতে বক্সিং রিং, বাস্কেটবল কোর্ট এবং সুইমিং পুল এবং জিমন্যাসিয়াম রয়েছে। মার্কিন মিডিয়া অনুমান করছে, বাড়িটির বিক্রয় মূল্য ২.৫ মিলিয়ন ডলার হতে পারে।
তুরান আরো বলেন, যেসব মুসলিম শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আসবে তারা বাড়িটির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারবে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে মুহাম্মদ আলী জাদুঘর এবং আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগিতা করা হবে। এতে আমরা গ্রীষ্মকালীন একটি ইসলামিক স্কুলের পাশাপাশি শক্তিশালী কমিউনিটি সেন্টারও গড়ে তুলতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলে ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি কিংবদন্তী এ বক্সারের জন্ম। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে নামে পরিচিত ছিলেন।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে পেশাদার বক্সিংজগতে প্রবেশ করেন। বক্সিংয়ে তিনি ছিলেন অনন্য ও অপরাজেয়। একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে তিন তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি ৬১টি ম্যাচের মধ্যে ৫৬টিতেই তিনি জয় লাভ করেন। তাকে দ্য গ্রেটেস্ট, কিং অব বক্সিং ও দ্য পিপল’স চ্যাম্পিয়ন ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করা হয়।
ক্যারিয়ারের শুরুতে মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকের লাইট হেভিওয়েট ক্যাটাগরিতে তিনি স্বর্ণপদক জিতে প্রথমবারের মতো হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপও জিতে নেন। এর কিছুদিন পর তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। মুসলমান হওয়ার পর তিনি মুহাম্মদ আলী নাম গ্রহণ করে বলেন, ‘ক্যাসিয়াস ক্লে ছিল আমার ক্রীতদাস নাম।’
১৯৯৯ সালে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড তাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় এবং বিবিসি শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত করে। ২০১৬ সালের ৩ জুন ইউনাইটেড ফিনিক্সে ৭৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। নাগরিক অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তিনি বেশ সোচ্চার ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, তুরস্কের দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশীপ প্রাপ্ত মুসলিম শিক্ষার্থীদের বাসস্থান, খরচপাতি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং সার্বিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে তুকিন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!