মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ পাবনার ২০ শ্রমিক

পাবনা প্রতিনিধি : চাঁদপুরের মতলব ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার সীমান্তবর্তী কালিয়াপুর এলাকার মেঘনা নদীতে মাটি বোঝাই ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২০ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। ৩ ঘন্টা পানিতে ভেসে থাকার পর প্রাণে বেঁচেছেন ১৪ জন শ্রমিক। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনের নাম পরিচয় জানা গেছে। ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এবং একজনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। নিখোঁজের সংবাদ পাবার পর থেকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারগুলোতে চলছে আহাজারী।
নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের মধ্যে ১৮ জনের নাম পরিচয় জানা গেছে এবং অপর ২ জনের পরিচয় জানা যায়নি। একজনের বাড়ি উল্লাপাড়া ও বাকিদের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়ায়।
নাম পরিচয় পাওয়া ১৮ জন হলেন, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মুন্ডুমালা গ্রামের গোলাই প্রামানিকের ছেলে ছোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-১, আব্দুল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নুর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-২, লয়ান ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম, দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামানিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন, মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চন্ডিপুর গ্রামের আমির খান ও আব্দুল লতিফের ছেলে হাচেন আলী এবং উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের তোফজ্জল হোসেনের ছেলে রহমত আলী।
এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চলনবিলের কৃতি সন্তান ও এলজিইডি’র প্রকল্প পরিচালক মমিন মজিবুল হক টুটুল সমাজী। ঘটনাস্থল থেকে রাত দশটায় তিনি এই প্রতিনিধিকে জানান, আমি খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে সেখানকার প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু হতে পারে।
বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের বরাত দিয়ে টুটুল সমাজী জানান, ঘটনাস্থলটি চাঁদপুরের মতলব উপজেলা ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার উপজেলার সীমান্তবর্তী কালিয়াপুর এলাকার মেঘনা নদীতে। মঙ্গলবার ভোররাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ট্রলারে মাটি নিয়ে নারায়নগঞ্জের বক্তাবলী এলাকায় যাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। ট্রলারের চালকসহ ৩৪ জন শ্রমিকের মধ্যে কেউ ঘুমিয়েছিলেন, কেউবা জেগে। পথিমধ্যে ভোররাত সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ট্রলারটি কালিয়াপুর নামক স্থানে পৌঁছার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মালবাহী জাহাজের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ১৪ জন সাঁতার জানায় প্রাণে বাঁচলেও ২০ জন নিখোঁজ হয়।
বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে মামুন আলী প্রামানিক ও পাইকপাড়া গ্রামের আশরাফ মোল্লার ছেলে শাহ আলম জানান, ট্রলারের মাথার দিকে ছিলেন মামুন আর পেছনের দিকে ছিলেন শাহ আলমসহ বাকিরা। ট্রলার ডুবে যাওয়ার মুহুর্তে আমরা ১৪ জন উঠে আসতে পারলেও অন্যরা পারেনি।
মামুন ও শাহ আলম আরো জানান, ওই সময় চারিদিকে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ৩ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে আমরা ঠান্ডা পানির মধ্যে সাঁতরে ভেসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল মৃত্যু খুব কাছে। পরিবারের কথা মনে পড়ছিল। আর ১০ মিনিট পানিতে থাকলে মারা যেতাম। মাটির ট্রলার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে না পৌঁছার কারণে মালিক পক্ষ মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পায়। সন্দেহ হলে তখন তারা আরেকটি ট্রলার নিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে।
পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন ট্রলার ডুবির ঘটনা স্বীকার করে জানান, ঘটনা শুনেছি। এ বিষয়ে আমরা মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা বিস্তারিত জানালে আপনাদের জানাতে পারবো।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!