রপ্তানিতে ‘খরা’ কাটাতে ইডিএফ ঋণের সীমাও বাড়ল
অর্থনীতি : বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে একজন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক এখন থেকে তিন কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এতদিন এই সীমা ছিল আড়াই কোটি ডলার। তহবিলের পরমিাণ বৃদ্ধি এবং সুদের হার কমানোর পর রোববার ঋণ সীমা বাড়ানোর এই ঘোষণা দিয়ে এক সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কোভিড-১৯ মহামারীরতে রপ্তানি আয়ের ‘খরা’ কাটাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই মহাসংকটে আমাদের রপ্তানি আয় একেবারেই কমে গেছে। রপ্তানিকারকদের বিশেষ করে পোশাক রপ্তানিকারকদের সহায়তা করতেই ইডিএফের ঋণের সীমা বাড়ানো হয়েছে।”
সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো রোববারের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২১ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী, উৎপাদনকারী-রপ্তানিকারকদের জন্য উপকরণাদি আমদানির ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলার রপ্তানি ঋণপত্র/নিশ্চিত চুক্তি/ অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ এবং বস্ত্র শিল্প মিল মালিকদের সংগঠন বিটিএমই’র একজন সদস্য ইডিএফ থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ গ্রহণ করতে পারত।
“এখন এই সীমা বাড়িয়ে ৩ কোটি ডলার করা হল।” ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন তারা। এদিকে গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ইডিএফের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে (৫ বিলিয়ন) উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেসঙ্গে রপ্তানিকারকদের জন্য তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার কমিয়ে ২ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ছাইদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। “এখন ইডিএফ থেকে ঋণ নিলে লাইবর রেটের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকবে না। সুদের হার হবে সরাসরি ২ শতাংশ। এই ২ শতাংশের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে ১ শতাংশ। আর যে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করবে তারা রাখবে ১ শতাংশ।”
এতদিন ইডিএফ থেকে কোনো রপ্তানিকারক ঋণ নিলে লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অপার রেট) এর সঙ্গে ১ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হত। সেক্ষেত্রে লাইবর রেট প্রতিদিনই উঠানামা করায় সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের মতো পড়ে যেতো। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ এপ্রিল পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন তাতে ইডিএফ ফান্ড ৩ দশক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করার কথা বলেছিলেন।
স্বাধীনতার পর বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ইডিএফ গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের রপ্তানি আয় বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই তহবিল বাড়তে বাড়তে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমএ, নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএসহ অন্যান্য রপ্তানিকারক সংগঠনের সদস্যরা ইডিএফ থেকে ঋণ পেয়ে থাকেন।
ছাইদুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ ও বিটিএমএ সদস্যদের ইডিএফ থেকে ঋণ দিতে চাহিদা বেশি। সে কারণে তাদের ঋণের সীমা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কঠিন সময়ে ইডিএফ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা বাড়ানোয় আমাদের খুব উপকারে আসবে। কয়েকদিন আগে এই তহবিলের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। সুদের হারও কমানো হয়েছে।
“সবমিলিয়ে এসব সিদ্ধান্ত কোভিড-১৯ মেকাবিলায় বড় অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।” গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই ওলট-পালট এখন কোভিড-১৯ মহামারীতে; তার ধাক্কায় উল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সব হিসাবনিকাশও। ওলট-পালটের এই সময়ে বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্সের চেয়ে পণ্য রপ্তানি আয় কম হয়েছে। শুধু কমই নয়, অর্ধেকে নেমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে মাত্র ৫২ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই একই মাসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি যে রপ্তানি আয় রেমিটেন্সের চেয়ে কম হয়েছে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম।এবারের লক্ষমাত্রার চেয়ে ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম রপ্তানি আয় এসেছে।